কৌতুক সাম্রাজ্যে ‘ভানু’ সম্রাট

0
1795

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা: কথায় আছে অভিনয়ের অত্যন্ত শক্ত একটি ধারা হল কমেডি বা কৌতুক। সেই ধারায় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের শুধু সংলাপ দিয়েই মন জয় করা যায় না, শরীরি ভাষাতে ফুটিয়ে তুলতে হয় অভিনয়কে। মানুষের মনে হাজারও দুঃখ-কষ্ট, সেই দুঃখ-কষ্টকে সাময়িক হাসিতে পরিণত করা সহজ কাজ নয়। নির্বাক চলচ্চিত্রে এই ধারায় আজও মানুষের মনে গেঁথে আছে যে নামটা তা হল চার্লি চ্যাপলিন। সবাক চিত্রে এই কাজটা সংলাপের মাধ্যমে কিছুটা ম্যানেজ করা গেলেও সমান তালে প্ৰয়োজন সেই শরীরি ভাষা। বাংলা চলচ্চিত্র জগতে আজও যাঁরা এই ধারায় অভিনয় করেন তাঁদের কাছে সাম্যময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রভাব অনেকটা।

আরও পড়ুন- ‘হীরক রাজা’ থেকে ‘আগন্তুক’, অভিনয়ের যাদুকর উৎপল দত্ত

- Advertisement -

সাম্যময় বন্দ্যোপাধ্যায়! অনেকেই চেনেন না এই নামটা। তবে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় নাম বললে এক বাক্যে চেনেন সবাই। সাম্যময়ের ডাকনামই তাঁর পরিচয়। কৌতুক রসে ভরপুর এক চেহারা। সংলাপ বলার এক অসাধারণ বৈশিষ্ট্য, কথা না বলে শুধু না বলা কথাটা বুঝিয়ে দেওয়াই ছিল ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুণ। পর্দায় তাঁর উপস্থিতিই মানুষকে হাস্যরসে মশগুল করে দিত।

তিনি পর্দায় না থাকলেও যেন থেকে যেতেন কোথাও। সেই অপূর্ণতা আজও বাংলা চলচ্চিত্র জগতকে নিভৃতে কাঁদায়। আজকের প্রজন্মের কাছে তাঁর সিনেমা অগোচরেই থেকে যায়। তবুও কখনও তাঁর সিনেমার এক ঝলক মুহূর্তে তাঁর প্রতি ভালোবাসা তৈরি করে দেয়।

ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনয় করেছেন ৩০০-রও বেশি ছবিতে। আর প্রায় ছবিতেই তাকে তৈরি করতে হয়েছে কৌতুক। সংলাপ থেকে শরীরি ভাষা দিয়ে নিজেই গড়ে নিয়েছিলেন কমেডির নিজস্ব ভুবন। সেই ভুবনে তিনিই সম্রাট। আমৃত্যু সেই মুকুট অটুট থেকে তাঁর মাথায়।

১৯২০ সালের ২৬ আগস্ট বাংলাদেশের ঢাকার বিক্রমপুরের পাঁচগাঁওয়ে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। মুন্সিগঞ্জের কাজি পাগলা এ.টি. ইনস্টিটিউট থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে ঢাকার পোগোজ স্কুল ও সেন্ট গ্রেগরি হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরে জগন্নাথ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। কিন্তু তার উচ্চশিক্ষা গ্রহণ আর সম্ভব হয়নি। কারণ স্বদেশি আন্দোলনের প্রতি তাঁর টান তৈরি হল। বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য ঢাকা শহর ত্যাগের পরোয়ানা জারি হয়। চলে আসেন কলকাতা।

কৌতুকতা দিয়েই সবসময় মানুষের মন জয় করে এসেছেন তিনি। ১৯৪৬ সালে ‘জাগরণ’ নামে বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। তবে বাণিজ্যিকভাবে সফল না হলেও তাঁর অভিনয় দাগ কাটে মানুষের মনে। এই ভানুর ‘জাগরণ’ ঘটে নির্মল বসুর ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ সিনেমার হাত ধরে। এই ছবিটি বাংলা কমেডি সিনেমার ইতিহাসে একটি অন্যতম মাইলস্টোন।

তাঁর খ্যাতির বিন্যাস এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে তাঁর নামেই বাংলা চলচ্চিত্রে দুটি সিনেমা তৈরি হয়। সিনেমার শিরোনামে ‘ভানু’ দেখেই হলের আসন পূর্ন হত। এতদিনের সিনেমা ইতিহাসে যা এর আগে কখনও হয়নি।

১৯৮৩ সালের ৪ মার্চ তিনি মাত্র ৬২ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যান। তবে তাঁর ছেড়ে যাওয়া জুতো আজও সাদরে পূজিত হয়। তাঁকে স্মরণ করেই আজকের কৌতুক অভিনেতারা তাঁদের ধারা তৈরি করেন। তাঁর অবদান অতুলনীয়। তাই তাঁর শততম জন্মবার্ষিকীতে শত কোটি প্রণাম।