সৌমেন ভট্টাচার্য: এ কি খেলায় মেতেছে ভারতের পূর্ব পড়শী দেশটি। সেই ৭১ সাল থেকে পাকিস্তানের (Pakistan) হাত থেকে দেশটিকে স্বাধীন করে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে বরাবরই সদর্থক ভূমিকা নিয়ে এসেছে ভারত (India) । সেই দেশ কিনা এমন কূটনৈতিক খেলায় মেতেছে যা নিয়ে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় অন্যতম বড় শক্তি ভারতের মাথাব্যথার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
কী এমন করলো ভারতের পূর্ব প্রান্তের বাংলা ভাষাভাষীর দেশটি, যা নিয়ে কূটনৈতিক মহলে ধীরে হলেও গুঞ্জন শুরু হয়েছে? যদিও সাউথ ব্লক (South Block) কিংবা দিল্লির নর্থ ব্লকের (North Block) পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনরকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়নি। তবে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক (Ministry of Foreign affairs) এই ব্যাপারে যে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল তা কিন্তু সূত্র জানা গিয়েছে। হাসিনা প্রশাসন কী এমন করল? সম্প্রতি ভারত সফরে এসে ভারতের সঙ্গে তিস্তা থেকে নৌ এবং পণ্য পরিবহন নিয়ে একাধিক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের চতুর্থ বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)।
আরও পড়ুনঃ হকার উচ্ছেদের প্রতিবাদ বিশ বাঁও জলে, অনিল বিশ্বাস থাকলে এমনটা হত কি
এই পর্যন্ত সবটাই ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু বাদ সাধলো ২৭ তারিখে বাংলাদেশ বিদেশ মন্ত্রকের সাংবাদিক সম্মেলনে সেদেশের বিদেশ মন্ত্রী হাছান মাহমুদের সাংবাদিক সম্মেলন । মন্ত্রী মশাই বলেছেন, বাংলাদেশের (Bangladesh) পরিকাঠামগত উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে চীন(China)। এবং প্রধানমন্ত্রী হাসিনা যখন জুলাই মাসের ৮ তারিখে চিনে সফরে থাকবেন ঠিক তখনই এই বিষয়ে কার্যকরী চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের। আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় (South East Asia) বরাবর ভারতের মিত্র বাংলাদেশের এহেন চীন প্রীতি দেখে ভারতীয় কূটনীতিকদের কপালে একটু হলেও চিন্তার ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে শুরু করেছে। কূটনৈতিক মহলের একাধিক জিজ্ঞাসা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের চীন প্রীতি দেখে।
প্রথমত, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় কি চীন বড়সড় পরিকল্পনা করতে চলেছে বাংলাদেশকে সামনে রেখে? দ্বিতীয়ত, চীনের আসল কৌশল কি ভারতের স্বাভাবিক মিত্র বাংলাদেশকে ভারত থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরিয়ে দেওয়া? তৃতীয়ত, চীন কি আসলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারতকে ঘিরে ফেলতে ধীরে ধীরে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশগুলিতে নিজেদের আধিপত্য বাড়াতে চাইছে?
যদিও বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রী হাছান মাহমুদ ভারতের ঐতিহাসিক মিত্রতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে চীন বাংলাদেশ সম্পর্ককে একটা নিছকই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক হিসেবেই তুলে ধরেছেন। তবে অতীতে পাকিস্তান শ্রীলঙ্কাসহ একাধিক দেশে চীন প্রথমে পরিকাঠামগত ক্ষেত্রগুলিতে বিনিয়োগের পাশাপাশি সেই দেশটাকেই ঋণের জালে জড়িয়ে ফেলে। পাকিস্তানের গদর বন্দরের নিয়ন্ত্রণ এখন চীনের হাতে রয়েছে। এই গদর বন্দরেই প্রথমে পরিকাঠামগত ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেছিল চীন। পাকিস্তান যখন ঋণের কিস্তি দিতে দিতে পারছিল না ঠিক তখন গোটা গদর বন্দরটাকেই ইজারা হিসাবে নিয়ে নেয় চীন। একই রকম ঘটনা চীন ঘটিয়েছে অতীতে শ্রীলঙ্কায়। তাই পোড় খাওয়া কূটনৈতিক মহলের আশঙ্কা, বাংলাদেশকেও আরেকটা শ্রীলঙ্কা কিংবা পাকিস্তান তৈরি করবে না তো চীন?
খাস খবর ফেসবুক পেজের লিংকঃ https://www.facebook.com/share/434buqMrZ98y4kma/?mibextid=qi2Omg
সম্প্রতি ভারতে দুদিনের সফরে তিস্তা নদীর জল বন্টন সহ একাধিক দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে কার্যকরী চুক্তি স্বাক্ষর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশে ফিরেই চীন সফরের তোড়জোড় শুরু করে বাংলাদেশ বিদেশ মন্ত্রক। তাই স্বভাবতই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হঠাৎ কেন চীন সফরে যাচ্ছেন? অন্যদিকে, চীনও কেন বাড়তি আগ্রহ দেখাচ্ছে এই সফরকে ঘিরে?
রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং কূটনীতিকদের একাংশ মনে করছেন, আসলে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত। আর সেই ভারতের অন্যতম স্বাভাবিক মিত্র বাংলাদেশকে যদি কব্জা করা যায় তাহলে ভারতকে হাতে এবং ভাতে মারতে অনেকটাই সুবিধা হবে চীনের। এখন বিচক্ষণ প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা তার স্বাভাবিক মিত্র ভারতকে না চটিয়ে কিভাবে চীনের পরিকাঠামগত বিনিয়োগকে নিজের দেশের উন্নতির কাজে লাগাতে পারবেন সেটাই এখন দেখার।