আশিষ সরকার, শিলিগুড়িঃ লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের কোচবিহার আসন দখল করতে পারেনি পদ্ম শিবির। নিশিথ প্রামাণিকের আসন কোচবিহারে জয় লাভকরেছে তৃণমূল। কোচবিহার আসনটি খুব অল্প ভোটের মার্জিনে ছিনিয়ে নেয় রাজ্যের শাসক দল তৃণমুল কংগ্রেস। এই আসন হাত থেকে বেরিয়ে যেতেই রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন নিশীথ প্রামাণিক। আবার গণনা নিয়ে তৃণমুলের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ আনেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি জানান, ১৯ রাউন্ড পর্যন্ত এগিয়ে ছিল তাদের প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিক। তার পরের রাউন্ড থেকেই সে পিছিয়ে যায়।এবং পরবর্তিতে ৪০২০৩ ভোটে জয়ী হন তৃণমুল প্রার্থী। গণনা কেন্দ্রে কারচুপির অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন শুভেন্দু অধিকারী। এই অভিযোগের বিরুদ্ধেই এবার মুখ খুললেন উদয়ন গুহ(Udayan Guha)।
গত ৪ তারিখে ভোটের ফলাফল বের হয়। উত্তরবঙ্গের আসন গুলোর মধ্যে কোচবিহার আসনে তৃণমূল কংগ্রেস জয়ী হয়। এই ফলাফল ঘোষিত হওয়ার সাতদিন বাদে প্রথমে প্রাক্তন সাংসদ তারপরে দুদিন বাদে বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী কোচবিহারে এসে দাবি করেন ১৯ রাউন্ড পর্যন্ত বিজেপি প্রার্থী এগিয়েছিলেন। ২০ রাউন্ডের পর থেকে ইভিএমগুলো বদল করে বিজেপি প্রার্থীকে হারানো হয়। এর জন্য শুভেন্দু অধিকারী হাইকোর্টে যাবেন। এই বক্তব্যের উত্তরে তথ্য পেশ করলেন উদয়ন গুহ। যেখানে দেখা গিয়েছে প্রথম রাউন্ড থেকেই তৃণমূল প্রার্থী এগিয়ে। প্রথম রাউন্ডে ৫৩৫৩ ভোটে এগিয়ে তৃণমূল প্রার্থী, দ্বিতীয় রাউন্ডে ৬০১৭ ভোটে এগিয়ে, পিছিয়ে যায় নবম রাউন্ডে এসে ৩৫৩ ভোটে। এবং দশম রাউন্ডে ৫০২ ভোটে পিছিয়ে যায়। তারপর থেকে একাদশ রাউন্ড, দ্বাদশ রাউন্ড পর পর ২৪ রাউন্ড পর্যন্ত এগিয়ে থাকে তৃণমূল। মোট ৩৯ হাজার ৪০০ ভোটে জয়ী হয় তৃণমূল প্রার্থী।
এই অভিযোগের বিরুদ্ধে এবার মন্তব্য করে উদয়ন গুহ জানিয়েছেন, অপপ্রচার, মিথ্যাচার শুরু করেছেন বিজেপি প্রার্থী। ভোটে হেরেই পরের দিন দিল্লি চলে যান বিজেপি প্রার্থী। সাতদিন পরে এসে তিনি বলেন, তাঁকে জোর করে হারানো হয়েছে। উদয়ন গুহ শুভেন্দুর অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, একজন দায়িত্বপূর্ণ ব্যক্তি যিনি পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার বিরোধী নেতা তিনি কি করে এই কথা বলেন? তাই সাংবাদিকদের হাতে কাগজ তুলে দিয়ে প্রমাণ দিলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ করছি যদি প্রমাণ করতে পারেন শুভেন্দু তাহলে আমাদের জয়ী প্রার্থীর পদ তো যাবেই। কিন্তু যদি না প্রমাণ করতে পারেন তাহলে এই ধরনের অপপ্রচার করার জন্য উনি কিভাবে মানুষের কাছে ক্ষমা চাইবেন সেটা পরিষ্কার করে বলুন’।
উদয়ন গুহ এদিন বলেন, শুভেন্দু অধিকারী কোচবিহারে এবং রাজভবনে রাজ্যপালকে ডেপুটেশন দিতে গিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তুলেছেন। একুশ সালে ভোটপরবর্তী হিংসায় পাঁচটা খুন হয়েছে তাঁর মধ্যে তিনটি খুনের অভিযোগ উদয়ন গুহের বিরুদ্ধে বলে জানিয়েছেন শুভেন্দু। এ প্রসঙ্গে গুহ স্পষ্ট জানান, ৫টা খুন কোথায় হয়েছে তা সম্পর্কে কোনও খবরই তাঁর কাছে নেই। ২১ সালের পরে ৩০২ ধারায় কোনও মামলা সারা পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে কোথাও যদি হয়ে থাকে তাঁর বিরুদ্ধে তাহলে তিনি মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দেবেন। এবং যদি তা প্রমাণ করতে না পারেন তবে উনি যেন বিধানসভার যে আসন তা থেকে পদত্যাগ করে রাজনীতি থেকে সরে যান। এই ধরনের মিথ্যাচার মানুষকে বিভ্রান্ত করে। এহেন মন্তব্য করে এবার কোচবিহার আসনে বিজেপির হারের পরে তোলা অভিযোগের পাল্টা উত্তর দিলেন উদয়ন গুহ।