তারকেশ্বর, সন্দীপ হালদার: ১১ জুন প্রশাসনিক বৈঠক থেকে সরকারি জমির পরিমাণের হিসাব চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী(Mamata Banerjee)। সেই কথামতোই নবান্ন থেকে শুক্রবারের মধ্যে সমস্ত দফতরে কত পরিমান সরকারি জমি রয়েছে তার তালিকা চেয়েছেন মুখ্যসচিব। তবে এর মধ্যেই সরকারি জমি লুঠ করে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তারকেশ্বরের এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। কিভাবে হল সরকারি জমি বিক্রি? ক্রেতারা কি আদৌ পাবেন সেই জমি? সরকারি জমি বিক্রির ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই উঠছে একাধিক প্রশ্ন।এই নিয়েই চরম উত্তেজনা তৈরি হয়েছে তারকেশ্বরের চাঁপাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের সহাচক এলাকায়।
স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তারকেশ্বরের চাঁপাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের সহাচক এলাকায় একটি ১৮ শতক জায়গার উপর শিশু শিক্ষাকেন্দ্র ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি করার জন্য বছর দেড়েক আগে সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন করেন এলাকার বাসিন্দারা। গত বুধবার সেই জমি সরে জমিনে খতিয়ে দেখতে যান আধিকারিকরা। জমির মাপ জোপ হচ্ছে দেখে ওই জমির ক্রেতাদের চক্ষু চড়ক গাছ। কারণ ওই জমি কেউ দশ বছর তো কেউ পাঁচ বছর আগেই এলাকার এক জমির দালালের কাছ থেকে কিনেছিলেন।এমনকি শতক পিছু চল্লিশ হাজার টাকা স্ট্যাম্প পেপারে চুক্তি করে কিনেছিলেন।যদিও স্ট্যাম্প পেপারে চুক্তি করে জমি কিনলেও অনেকেই সেই জমি রেজিস্ট্রি করতে পারেননি আবার অনেকের দলিল হয়ে গেলেও পর্চা বের করতে পারেননি ফলে এ বিষয়ে একাধিক বার প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও মেলেনি সদুত্তর। এমনই দাবি জমি ক্রেতাদের।
বুধবার জমির মাপ জোপ হতেই সমস্ত বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায় জমির ক্রেতাদের কাছে। তাঁরা জানতে পারেন সরকারি জমি তাদের বিক্রি করা হচ্ছিল দালালের মারফত। জমির ক্রেতাদের অভিযোগ, সরকারি জমি বিক্রির মূল মাথা এলাকার তৃণমূল নেতা তথা চাঁপাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান প্রভাত চট্টোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, এলাকায় বিঘার পর বিঘা সরকারি জমি এভাবেই বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এলাকার বাসিন্দারা।
ঘটনা জানাজানি হতেই জমির দালাল সাহেব মালিক নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে টাকা ফেরতের জন্য বারবার চড়াও হচ্ছেন ক্রেতারা। বাড়িতে সাহেব মালিকের দেখা না মিললেও তার স্ত্রী ও মায়ের সাফ জবাব জমি কেনার সময় দেখে কেনেনি কেন ? এমনকি সংবাদ মাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে সাহেব মালিকের স্ত্রী দাবি করে জানিয়েছেন, বহু সরকারি জমি বিক্রি করেছে এলাকার তৃণমূল নেতারা সেই জমি আগে ফেরানো হোক।
অন্যদিকে যার বিরুদ্ধে জমির দালালদের মাথায় হাত রাখার অভিযোগ, সেই তৃণমুল নেতা তথা স্থানীয় পঞ্চায়েত উপপ্রধান প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা এবং বিরোধীরা তাঁকে ও তাঁর দলকে বদনাম করতে চক্রান্ত করছে। যদিও বিরোধীদের দাবি এই এলাকায় তৃণমূল নেতা প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের কথাই শেষ কথা, তাঁর মদতে অবাধে সরকারি জমি লুঠ করে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে প্রশাসনের সহযোগিতায়। যদিও এ বিষয়ে তারকেশ্বর ব্লকের ভূমি দপ্তরে গিয়েও কোনো সদুত্তর মেলেনি বলে জানা গিয়েছে।
তারকেশ্বর ব্লকের ভূমি দফতরের সাময়িক দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক রাজেশ মুন্ডা ক্যামেরার সামনে কোনও কথাই বলতে চাননি। যদিও তারকেশ্বর ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কৃষ্ণা অধিকারী বলেন, সরকারি জমি বেচা কেনার কোনও অভিযোগ তিনি পাননি অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, তবে গত ১১ জুন প্রশাসনিক বৈঠক থেকে সরকারি জমির তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee )। সেই মত ১৯ জুন নবান্ন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয় কোন দফতরের হাতে কত পরিমান সরকারি জমি আছে তা ২১ জুনের মধ্যে মুখ্যসচিবকে রিপোর্ট করতে হবে। তারকেশ্বরের এই ঘটনার পরেই এবার নানান মহলে একটাই প্রশ্ন উঠছে। সব দফতর কি সঠিক সরকারি জমির হিসাব আদৌ দিতে পারবে!