রাকেশ সেখ,মথুরাপুর: ২০২৪ এর সর্বভারতীয় ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষা নিট ইউজিতে সাফল্য লাভ করার পরও অন্ধকারে কৃষ্ণচন্দ্রপুরের স্নেহা নাটুয়া ভবিষ্যৎ। প্রবল আর্থিক সংকটের মধ্যেও কোন নামি দামি কোচিং সেন্টার ছাড়া বাড়িতে পড়েই এসেছে তাঁর এই সাফল্য। ২০২৪ সালের সর্বভারতীয় ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষায় (নিট ইউজি) ৭২০ নম্বরের মধ্যে ৬৩২ নম্বর পেয়েছেন তিনি। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের মেধাবী এই ছাত্রী দিনে প্রায় ১৫-১৬ ঘণ্টা কঠোর পরিশ্রম করে পেয়ছে এই সাফল্য।
এতো পরিশ্রমের পরেও অনিশ্চয়তায় তাঁর ভবিষ্যৎ। ২০২৪-এর ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষায় এত বড় দুর্নীতি আগে কোন দিন হয়নি বলে অভিযোগ পরীক্ষার্থীদের। স্নেহা বলেন, “আগের বার পরীক্ষা দিয়ে আমার খুব ভালো নম্বর আসেনি। তাতে আমি ভেঙে পরিনি। আমি জানতাম আমার চেষ্টেয় ত্রুটি ছিল। কিন্তু এই বারে ৬৩২ নম্বর আসার পরও আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি চিন্তায় আছি।”
তিনি আরও বলেন, “পরীক্ষা দিয়ে নাম্বার মিলিয়ে দেখার পর ভেবেছিলাম কলকাতার মধ্যে কোন ভালো সরকারি কলেজে ভরতি হতে পারব। রেজাল্ট বেরনোর পর দেখলাম কাট অফ মার্ক অনেক বেশি, কুড়ি হাজার এর এদিক ওদিক হয়ে গেছে। যেখানে আমার র্যাঙ্ক আসার কথা কুড়ি হাজার সেখানে আমার এসেছে ৪৫ হাজারের মতো। খুব কষ্ট হচ্ছে এটা ভেবে যে এত দিনের পরিশ্রম না বৃথা চলে যায় আমার।”
স্নেহার বাবা শেখর নাটুয়া এবং মা স্বপ্না নাটুয়া সব সময় তাঁর পাশে থেকেছে। স্নেহার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং বেশ কিছু ব্যক্তি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখত ডাক্তার হওয়ার। সেই স্বপ্ন এখন প্রশ্নের মুখে।
নিট কেলেঙ্কারির কথা শোনা যাচ্ছে তাঁর মা-এর কাছেও। তিনিও তাঁর মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। স্নেহার মা বলেন, “মেয়ের নাম্বারে আমি খুব খুশি হয়েছি। কিন্তু যেদিন রেজাল্ট বেরিয়েছে সেদিন থেকে মেয়ে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এত ভালো নাম্বার পেয়েও মেয়ে বলছে এবারেও সে সরকারি কলেজে ভরতি হতে পারবে না।”
তিনি কাঁদতে কাঁদতে আরও বলেন, ” আমাদের সামর্থ্য নেই বেসরকারি কলেজে পড়ানোর। আমার মেয়ে দিন রাত এক করে পড়াশোনা করেছে। ১৪ তারিখের রেজাল্ট কেনো ৪ তারিখ সন্ধ্যায় প্রকাশ হল সেটা বুঝতে পারছি না আমারা। আমারা চাইছি যেন মহামান্য আদালত আমাদের কষ্টের কথা ভেবে রায় দেয়।”
শুধু স্নেহা না এমন অনেক পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ এখন প্রশ্নের মুখে। নিট পরীক্ষার্থীদের কথায়, এর আগে নিটে এত বড় দুর্নীতি দেখা যায়নি। ছেলে-মেয়েরা নিজেদের আশা, ইচ্ছে, শখ সবকিছু বাদ দিয়ে শুধু নিট পরীক্ষায় ভালো নাম্বার আনার জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করেন। অনেকে নিটের পরীক্ষা বাতিল করার কথাও উল্লেখ করেছেন। অধিকাংশ পরীক্ষার্থীরা এখন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অপেক্ষায় দিন গুনছেন।