রফিকুল ঢালী, কুলতলী: মায়ের নিথর দেহের পাশে পড়ে আড়াই বছরের শিশু। অঝোরে কেঁদে চলেছে শিশু তাতেও সাড়া নেই মায়ের। কেউ নেই গোটা বাড়িতে। বাবা সহ সমস্ত বাড়ির লোক পলাতক। খবর যেতেই হাজির হয় পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে কুলতলী থানার পুলিশ উদ্ধার করে মা ও শিশুকে। এরপরেই খুনের মামলা রুজু করা হয়। পলাতক অভিযুক্তদের খুঁজে বের করতে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।
সূত্রের খবর অনুসারে, কুলতলী থানার মধুসূদনপুর এলাকায় বাড়ি মামনি হালদারের। তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় কুলতলির দেউলবাড়ী দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মাধবপুর এলাকার যুবক সাগর হালদার এর সাথে। দুই বাড়ির এই বিয়েতে মত ছিল না। এই কারণে বছর তিনেক আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করে তারা। যদিও পরে দুই বাড়ির লোকই বিষয়টি মেনে নেয়। তাদের একটি আড়াই বছরের সন্তানও আছে। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই পারিবারিক নানান কারণে প্রায়ই স্বামী স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি লেগে থাকতো।
অভিযোগ করা হয়েছে, স্বামী সাগর হালদার ও ভাসুর বুদ্ধিশ্বর হালদার মিলে মামনিকে মারধর করত। বেশ কয়েকবার দুই পরিবার একসঙ্গে বসে এবং গ্রামের মানুষকে নিয়ে এর মীমাংসাও করে। তারপর কিছুদিন ঠিকঠাক চললেও ফের অশান্তি শুরু হত। কিছুদিন আগে জামাইষষ্ঠীতে মামনি হালদার স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে বাপের বাড়িতে আসে। জামাইষষ্ঠী মিটলে এখান থেকেই স্বামী কলকাতায় কাজে চলে যায়। কলকাতায় মামনির স্বামী ওরফে সাগর হালদার রঙের কাজ ছাড়াও আরও নানান কাজ করত। শনিবার স্বামী সাগর হালদার ফোন করে মামনি কে বাড়ি যেতে বলে। স্বামীর কথামতো শনিবারই শ্বশুরবাড়ি ফিরে যায় মামনি।
এরপরেই, রবিবার মামনি তার বাবাকে ফোন করে বলে যে তাকে প্রচন্ড মারধর করা হচ্ছে। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই জামাই ফোন করে বলে মামনি বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হয়েছে। এই খবর পেয়ে মামনির বাড়ির লোক তার শ্বশুরবাড়িতে হাজির হয়। সেখানে গিয়ে দেখে মামনির দেহ বাড়ির উঠোনে পড়ে রয়েছে। পুরো বাড়ি ফাঁকা। মায়ের মৃতদেহের পাশে বসে কেঁদেই যাচ্ছিল একরত্তি শিশু।
এই চিত্র দেখার পরেই, মামনির পরিবারের লোকজন খবর দেয় কুলতলী থানায়। পুলিশ গিয়ে তার দেহ উদ্ধার করে। দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন আছে বলে জানা গিয়েছে। ঘটনায় মামনির পরিবারের পক্ষ থেকে কুলতলী থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়। মামনির বাবা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন থানায়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। মামনির দেহ আজই ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হবে।