পুলক বেরা, পূর্ব মেদিনীপুর: সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (CSF) রাইনোরিয়া রোগটির নাম অনেকেরই অজানা। নামের মতই খটমট রোগের উপসর্গ গুলো। সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (CSF) রাইনোরিয়া দেখা দেয় যখন ডুরা এবং খুলির গোড়ার মধ্যে ফিস্টুলা থাকে এবং নাক থেকে CSF স্রাব হয়। সিএসএফ (CSF) রাইনোরিয়া বা লিকোরিয়া সাধারণত মাথার আঘাতের (সামনের-বেসাল স্কাল ফ্র্যাকচার), ইন্ট্রাক্রানিয়াল সার্জারি বা ধ্বংসের ক্ষতগুলির ফলে ঘটে।
তমলুক মেডিক্যাল কলেজে এমনই বিরল রোগের সফল অস্ত্রোপচারে প্রাণ ফিরল গৃহবধূর। চিকিৎসকদের কথায়, ওই মহিলার নাক দিয়ে একরকম ফ্লুইড বেরিয়ে আসছিল সেটা আসলে সেরিব্রো স্পাইনাল ফ্লুইড অর্থাৎ মাথার ঘিলুর খানিকটা অংশের রস! যা পরবর্তীতে বড়সড় বিপত্তি তৈরি করত। গত শনিবার প্রায় আড়াই ঘণ্টার অস্ত্রোপচার হয়। আশার আলো দেখছেন জেলার চিকিৎসকেরা। খুশি রোগীর আত্মীয় পরিজনেরাও।
জেলা সদর তমলুকের পাশাপাশি বিভিন্ন মহকুমা এলাকায় গজিয়ে উঠেছে একের পর এক নার্সিংহোম থেকে শুরু করে ডায়াগনস্টিক সেন্টার। কিন্তু তারপরেও রোগীর পরিষেবা নিয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এই যেখানে ছবি সেখানে সরকারি পরিকাঠাময় এই বিরল চিকিৎসা নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রম।
মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, তমলুকের রাজনগর জেলার বাসিন্দা গৃহবধূ দিপালী বর্মন(৪৭), স্বামী সুকুমার বর্মনের সঙ্গেই মাছের ব্যবসা করে কোনওরকমে সংসার চালাতেন। বছর তিনেক আগে অসহ্য মাথার যন্ত্রণা শুরু হয় দিপালীদেবীর।
আর তাতেই সেই মাছের ব্যবসা প্রায় লাটে ওঠবার জোগাড়। এদিক ওদিক ঘুরে শেষে তমলুক মেডিক্যাল কলেজে এসে হাজির হন তাঁরা । দিপালীদেবীর দাবি, মাস ছয় আগে থেকেই নাক দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়েছিল। সেই সঙ্গে মাথার যন্ত্রণা। চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। তাতেই সামনে আসে সিএসএফ রাইনোরিয়া নামে এক বিরল রোগের কথা।
চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো মেডিক্যাল কলেজেই শুরু হয় ওই মহিলার অস্ত্রোপচারের যাবতীয় তোড়জোড়। গত শনিবার প্রায় আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় নাকের ভিতর দিয়ে এনডোস্কপির মাধ্যমে মাথার খুলির ফুটো হয়ে যাওয়া অংশে অস্ত্রোপচার হয়। মেডিকেল কলেজের ইএনটি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসার ডা. সৌমিক সাহার নেতৃত্বে প্রায় চার সদস্যের চিকিৎসকদের একটি দল ওই মহিলার পায়ের একটি অংশের মাংসপিণ্ড কেটে তা অস্ত্রোপচার করতে সফল হয়েছেন বলে দাবি। গৃহবধূর স্বামী সুকুমার বর্মন বলেন, “স্ত্রী সুস্থ হতে পেরেছে আমারও ভীষণ ভালো লাগছে। আমি ভাবতেই পারিনি এমন বিরল রোগের চিকিৎসা এই সরকারি হাসপাতালে হতে পারে।”
বর্তমানে দিপালী বর্মনের শারীরিক অবস্থাও অনেকটাই উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইএনটি অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডা. সৌমিক সাহা। তিনি বলেন, “এ ধরনের জটিল অস্ত্রপচার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তথা মেডিকেল কলেজে এই প্রথম।” মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল শর্মিষ্ঠা মল্লিক জানান, “মেডিক্যাল কলেজের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নের পাশাপাশি রোগীদের পরিষেবা প্রদানে আমরা যথেষ্টই সফল। আগামিদিনেও যাতে তা সম্ভব হয় সেই চেষ্টাই করব।”।