সুজয় গুহ: শেষ ওভারের শেষ চার বলে দরকার কুড়ি রান। সাউথ আফ্রিকান বোলার এনরিচ নর্তের বলে পর পর তিনটি ছয় মেরে তৃপ্তির হাসি হাসলেন গুজরাট ব্যাটসম্যান রাহুল তেওয়াতিয়া। তিনটি ছয়ের সুবাদে এক ঝটকায় আঠারো রান এলো। শেষ বলে জিততে হলে দরকার মাত্র দু’রান। ওদিকে পর পর তিনটি ছয় হজম করতে পারেননি অতৃপ্ত সাউদি বোলার নর্তে। শেষ বলটা ঝাড়লেন গোছে (ইয়র্কার)। ব্যাটে বলে না লাগাতে পেরে মুখ থুবড়ে পড়লেন তেওয়াতিয়া। উড়ে যাওয়া উইকেট হাতে তুলে দৌড় লাগালেন নর্তে। গুজরাটের বিরুদ্ধে আইপিএলের চুয়াল্লিশ তম ম্যাচ পকেটে পুরলো আন্ডারডগ দিল্লি।
আরও পড়ুন: রাজার শাসন
না, এটা কোনও ক্রিকেট ম্যাচের কভার রিপোর্ট নয়। তৃপ্ত এবং অতৃপ্ত জিবিত আত্মার ময়নাতদন্ত। বহু মানুষ জয়ী হয়েছেন ধরে নিয়ে তৃপ্তির হাসি যখনই হেসেছেন তখনই তিনি ফেসেছেন এমন বহু উদাহরণ সমাজের চারপাশে রয়েছে। বাজারে গিয়ে এক ব্যক্তি দেখলেন ১০০ টাকায় ৪টি মুসম্বী ফল বিকোচ্ছে। অ অর্থাৎ একটি ফল পিছু পঁচিশ টাকা, চড়া দাম।সাশ্রয়ের জন্য সেই ব্যক্তি অপরদিকের ফল বিক্রেতার কাছ থেকে এক ডজন মুসম্বি ১০০ টাকায় কিনে ফেলে তৃপ্তির হাসি হাসলেন। যদিও আক্ষরিক অর্থে জয় তখনও নিশ্চিত হয়নি। বাড়ি ফেরার পর ওই ব্যক্তি যখন দেখলেন এক ডজন ফলের মধ্যে কয়েকটি অবস্থা খুবই খারাপ (ঠকে যাওয়া), তখন তিনি বেশ বিরক্তই (অতৃপ্ত) হলেন। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন জয়ের সঙ্গে সঙ্গে জয়ী ব্যক্তির ডোপামাইন, এনডোরফিনস জাতীয় হরমোনের নিঃসরণ ঘটে, যা তার শরীরে অপার্থিব অনুভূতি প্রদান করে। আবার একই সঙ্গে আমাদের যাবতীয় দক্ষানুভূতির নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে সেরোটেনিন হরমোন। এখন আজকের এই রচনার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল জয়ের অন্তিম লগ্নে পৌঁছে এই দুটি হরমোনের নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি কিন্তু আমরা অনেকেই ভুলে যাই। তারই বিচ্ছিন্ন কয়েকটি আলোচনা আমাদের এই রচনায় উঠে আসছে।
একবার এক লেভেল ক্রসিং-এ ঠায় রোদ্দুরে দাঁড়িয়ে রয়েছি। সাহসী ভঙ্গিতে বিরক্ত মুখে আমার গা ঘেঁষে এক ব্যক্তি লেভেল ক্রসিংয়ের গেট টপকে ওপারে যাওয়ার চেষ্টা করলেন। ডাউনের ট্রেন আসছে কিন্তু সেই ব্যক্তির বেশ তাড়া আছে বোঝা গেল। কিন্তু সেই ব্যক্তির তেজ এবং সাহসিকতার কাছে ট্রেনও বোধ হয় পরাস্ত হল উনি প্রথম লাইনটা টপকে চলে গেলেন। এরপরে বুঝিবা তার মনে তৃপ্তির উদয় হয়েছিল, তিনি বুঝিবা পিছনে তাকিয়ে আমাদের বোকা মনে করে একবার হেসেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী ছবিটা খুবই নৃশংস এবং বেদনাদায়ক। আপ লাইনেও যে একই সময়ে আরেকটি ট্রেন আসছিল সেটি তার গোচরে ছিল না। মুহূর্তের মধ্যে ওই ব্যক্তি এবং তার সাইকেলটি বিকট শব্দে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।
জয় নিশ্চিত হওয়ার পরেও যে তৃপ্তির হাসি ক্ষতিকারক তা প্রমাণ হয়েছিল ২০০৬ সালের রাজ্য রাজনীতির বিধানসভা নির্বাচনে। ২০০৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ২৩৫ আসন নিয়ে জয়ের পরে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বিরোধীদের উদ্দেশে এক বার বলেছিলেন, ‘‘আমরা ২৩৫, ওরা ৩০। ওদের কথা কেন শুনব?’’ তারপর বাকিটা ইতিহাস। আবার একইভাবে সেই ঘটনার একপক্ষ বছর পরে আবার সেই তৃপ্তির হাসি শোনা যাচ্ছে তদানীন্তন বিরোধী দলের কন্ঠে। দুয়ারে পঞ্চায়েত। সেই লক্ষ্যে বঙ্গ রাজনীতির ময়দানে সব দল কোমর বেঁধে নামলেও শাসকদলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন ছাব্বিশের অঙ্ক। ২৩-এর শুরুতে দাঁড়িয়েই বেঁধে দিলেন ২০২৬ সালের বিধানসভার লক্ষ্যমাত্রা। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, “২০১১ সালে তৃণমূলের কটা আসন ছিল? মোটে ১৮৪টা। ২০১৬ সালে ২১১, তারপর ২০২১ সালে ২১৪। ২০২৬ সালে এবার ২৪০ হবে।”
খাস খবর ফেসবুক পেজের লিঙ্ক:
https://www.facebook.com/khaskhobor2020/
জয়ের আগেই জয়ের তৃপ্তির হাসি যে বেমানান তা বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ নির্দেশ করে। আর এক্ষেত্রে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শরীরে ডোপামাইন, এনডোরফিনস না সেরোটেনিন কোন হরমোন বেশি নিঃসৃত হচ্ছে তা মনোবিজ্ঞানীরাই বলতে পারবেন।