বিশ্বদীপ ব্যানার্জি: মা মাকড় চণ্ডীকে চেনেন? হাওড়া জেলার একটি প্রসিদ্ধ অঞ্চল মাকড়দহ। এই মাকড়দহের নাম হয়েছে দেবী মাকড়চণ্ডীর (Makarchandi) থেকেই। কিন্তু কে এই দেবী মাকড়চণ্ডী? কেনই বা তার নাম থেকে এলাকার নাম হয়েছে মাকড়দহ?
আরও পড়ুন: অথঃ কবচ উবাচ: খায় না মাথায় দেয়
এই প্রসঙ্গে দুটি মত চালু। একটি মত বলছে, মাকড়চণ্ডী দেবীর (Makarchandi) নাম হয়েছে বিখ্যাত মার্কণ্ডেয় পুরাণ থেকে। আবার অন্য একটি মত অনুযায়ী, মকর অর্থে কুমীর, সেই মকর থেকে এসেছে মাকড়চণ্ডী (Makarchandi) নামটি। শোনা যায়, মাকড়দহ অঞ্চলের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সরস্বতী নদীতে একসময় প্রচণ্ড কুমীরের উৎপাত ছিল। এই কুমীরের হাত থেকে বাঁচতেই মকর চণ্ডীর পুজো শুরু করেন জলপথে নিত্য যাতায়াতকারী সওদাগরেরা। মকর চণ্ডী-ই কালক্রমে মাকড়চণ্ডীতে পরিণত হয়েছেন।
কথিত রয়েছে, বাংলার বিখ্যাত শ্রীমন্ত সওদাগর নদীপথে বাণিজ্য করার সময় একবার দেবী মাকড়চণ্ডীকে স্বপ্নে দেখেন। তারপর তিনিই এই অঞ্চলে দেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময় নাকি সরস্বতী নদী ত্রিবেণী থেকে মুক্ত হয়ে দক্ষিণ বইতে শুরু করে। তারপর এই মন্দিরে কাছে এসে পূর্ববাহিনী হয়। মন্দিরের ঠিক পিছনে একটি পুকুর রয়েছে বর্তমানে। বলা হয়, এটিই একসময় সরস্বতী নদীর অংশ ছিল। এখন এর নাম, সরস্বতী কুণ্ড।
মাকড়চণ্ডীর (Makarchandi) কোনও মূর্তি নেই। টকটকে লাল সিঁদুরে রাঙানো একটি শিলাখণ্ডকে পুজো করা হয়, যাঁকে নানাবিধ অলঙ্কারে সাজানো হয়ে থাকে। এই মূর্তি নিয়েও একটি কিংবদন্তি চালু আছে। শোনা যায়, শ্রীমন্ত সওদাগর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মাকড়চণ্ডী মূর্তিটি অতীতে ছিল অনেক উঁচু। ফলে পুরোহিতের পুজো করতে খুব অসুবিধা হত। একদিন পুরোহিত আর থাকতে না পারে তিরস্কার করেন দেবীকে। বলেন, “মা, তুই এত বড় যে ঠিক করে তোকে মালাটাও পরাতে পারি না।” এরপরই ঘটে যায় অলৌকিক কাণ্ড। দেবীমূর্তি ধীরে ধীরে পাতালে প্রবেশ করতে থাকে। তখন ভয় পেয়ে পুরোহিত জড়িয়ে ধরেন মূর্তিকে। নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইতে থাকেন দেবীর কাছে। এতে দেবীর দয়া হয়। পুরোহিত জড়িয়ে ধরামাত্রই দেবীর পাতাল প্রবেশ থেমে যায়। দেবীর গলা অবধি পাতাল প্রবেশ হয়েছিল, সেখানেই থেমে যায়, শুধু বেরিয়ে থাকে দেবীর মস্তক।
দেবীর বিশেষ পুজো হয় কার্তিক মাসের দীপান্বিতা অমাবস্যা অর্থাৎ কালীপুজোর দিন। কালীপুজোর দিনে সমস্ত নিয়ম যথাযথ পালন করেই এদিন মাকড়চণ্ডীকে (Makarchandi) পুজো করা হয়ে থাকে। থাকে বিশেষ ভোগের ব্যবস্থাও। এমনকি এও শোনা যায় যে একটা সময় নাকি মন্দিরে পুজোর সময় যে ঢাক বাজত, তার আওয়াজ যতদূর অবধি পৌঁছত, ততদূর পর্যন্ত আর কোনও পুজো হত না।
খাস খবর ফেসবুক পেজের লিঙ্ক:
https://www.facebook.com/khaskhobor2020/
শ্রীমন্ত সওদাগরের প্রতিষ্ঠিত মন্দিরটি যদিও এখন আর নেই। বর্তমান মন্দির রামকান্ত কুণ্ডুচৌধুরী নামক জনৈক জমিদার নির্মাণ করেন। মূল গর্ভগৃহ ছাড়াও মন্দির প্রাঙ্গণে রয়েছে নাটমন্দির, শিবমন্দির ও নহবতখানা। দেবীর ভৈরবের একটি পূর্বমুখী মন্দিরও রয়েছে এখানে। তবে পুরনো মন্দির ধ্বংসাবশেষস্বরূপ তিনটি পাথরের টুকরো এখনও দেখতে পাওয়া যায়।