খাস খবর ডিজিটাল ডেস্ক : ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে বিজেপির খারাপ ফলের দায় কার? তা নিয়ে গেরুয়া শিবিরের অভ্যন্তরে জোর আলোচনা চলছেই। ইতিমধ্যে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর পদ পেয়ে যাওয়ায় দলীয় নিয়ম অনুযায়ী তাকে পদ ছাড়তে হবে। আগামী অগষ্টের মধ্যেই রাজ্য সভাপতির আসনে নতুন কোনো নেতৃত্বকে বসানোর কথা জানিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি।
আরও পড়ুন : দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ,পঞ্চায়েত অফিসে ঝুলল তালা , চাঞ্চল্য অন্ডালে
সেক্ষেত্রে পরবর্তী রাজ্য সভাপতি কে হতে চলেছেন? তা নিয়ে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। দলীয় বৈঠকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর সঙ্গে উঠে আসছে সদ্য পূর্ব বর্ধমান আসন থেকে হেরে যাওয়া দিলীপ ঘোষের নামও। দলের মধ্যেই আলোচনা চলছে ২০১৯ সালের ১৭তম লোকসভা নির্বাচনে দিলীপের নেতৃত্বেই বাংলায় নজিরবিহীন ফল করেছিল বিজেপি। ৪২ টি আসনের মধ্যে ১৮টি আসনে জয়লাভ করেছিল বিজেপি। এবারের ভোটে সেই রেজাল্টকে ছাপিয়ে যাবে বলে মনে করেছিলেন দলের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশ হওয়ার পরই বোঝা যায়, দিলীপের রেকর্ড ভাঙা তো দুরস্ত, দুর্নীতিতে জর্জরিত তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট বাক্স সেইভাবে দাগ কাটতে পারেনি পদ্ম ব্রিগেড। ‘২১ এর বিধানসভার মতোই শোচনীয় ফল হয়েছে। ১৮ থেকে এক ধাক্কায় আসন কমে দাঁড়িয়েছে ১২। অপরদিকে সাতটি আসন বাড়িয়ে ২৯ এর গণ্ডি ছুঁয়েছে তৃণমূল। বাংলায় দলের ফল খারাপের জন্য আরএসএসের নিজস্ব পত্রিকা স্বস্তিকায় সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে পরিষ্কারভাবে লেখা হয়েছে, তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কোনও গ্রহণযোগ্য বা জোরদার মুখ ছিল না বিজেপির। এবারের লোকসভা ভোটে বঙ্গ বিজেপির মূল মুখ বলতে ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সরাসরি কারও নাম উল্লেখ না করা হলেও শুভেন্দু-সুকান্তকে ইঙ্গিত করে এ কথা বলা হয়েছে বলে মত পর্যবেক্ষকদের অনেকে। নির্বাচনে হেরে বিজেপির দলীয় কোন্দলের দিকেই আঙ্গুল তুলেছিলেন দিলীপ ঘোষ। স্বাভাবিকভাবে রাজ্য সভাপতি পদে পুনরায় দিলীপ ঘোষকে বসানোর দাবিতে সরব হয়েছেন দলের একাংশ নেতৃত্ব। যদিও অপর অংশ চাইছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে এই পদে বসানো হোক।
একুশের বিধানসভা ভোটের মুখে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মেদিনীপুরে অমিত শাহের সভায় বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন শুভেন্দু। ফলপ্রকাশের পর থেকে বিরোধী দলনেতার পদে রয়েছেন তিনি। দলের ভিতরের খবর, রাজ্য সভাপতি পদের বসার ক্ষেত্রে শুভেন্দুর সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি নিজেই। বিজেপির সংবিধান অনুসারে, কোনও ব্যক্তি একসঙ্গে ২টি পদে থাকতে পারেন না। সেক্ষেত্রে রাজ্য সভাপতি পদে বসলে বিরোধী দলনেতার পদটি ছাড়তে হবে নন্দীগ্রামের বিধায়ককে। পদাধিকার বলে বিরোধী দলনেতা মুখ্যমন্ত্রীর সমান পদ মর্যাদা পেয়ে থাকেন। ফলে শুভেন্দু বিরোধী দলনেতার পথ আদৌ ছাড়বেন কিনা তা নিয়ে দলের অন্দরে সংশয় রয়েছে। বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, দিলীপ ঘোষের পর সুকান্ত মজুমদার রাজ্য সভাপতি পদে বসলেও বকলমে সেই দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন শুভেন্দুই। বা বলা ভাল, শুভেন্দুর মতকে গুরুত্ব না দিয়ে সুকান্ত নিজে কোন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এমন নজির সাম্প্রতিক অতীতে নেই। বরং সুকান্তর আমলে আরএসএস পন্থীদের দলের অন্তরে কোণঠাসা করার অভিযোগ রয়েছে। সেদিক থেকে শুভেন্দু বিরোধী দলনেতার পদে বসলে নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে দুবছর বাদে বিধানসভা ভোট। তাই সব পক্ষকে সামলে নতুন রাজ্য সভাপতি ঠিক করা পদ্ম শিবিরের কাছে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জেরও বটে। সেই সূত্রে দিলীপ শুভেন্দু ছাড়াও উঠে আসছে একাধিক নাম। সেই তালিকায় দলের বর্ষীয়ান নেতা, রাজ্যের মুখপত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের নাম যেমন রয়েছে তেমনই রয়েছে দলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের নামও। কলেজে পড়ার সময় থেকে আরএসএস এর সঙ্গে যুক্ত জগন্নাথ। অতীতে রাজ্যের দুটি প্রথম শ্রেণীর সংবাদমাধ্যমে সফল সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। জেলা থেকে নবান্ন কভার করার অভিজ্ঞতা রয়েছে জগন্নাথের ঝুলিতে। সেই সূত্রে দক্ষিণবঙ্গকে হাতের তালুর মত চেনেন জগন্নাথ। তাই রাজ্য সভাপতির পদে দিলীপ শুভেন্দুর বিকল্প হিসেবে জগন্নাথের নামও ক্রমে জোরাল হচ্ছে দলের অন্দরে। আরএসএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন দেখার মমতার বিকল্প মুখ হিসেবে বাংলায় বিজেপি কাকে বেছে নেয়।