খাস খবর ডেস্ক: এই মাসেই প্রকাশিত হয়েছে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল। রাজ্যে মোট ২৯ টি আসন জিতে নিয়েছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু সেই জয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই হকার বিতর্কে উত্তাল বাংলা। এই অবস্থায় এদিন নবান্নের সভা ঘর থেকে হকারদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কী বললেন তিনি?
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “হকার উচ্ছেদ আমার লক্ষ্য নয়। আমি হকারদের যথেষ্ট ভালোবাসি। যেদিন সিপিএমের আমলে অপারেশন সানসাইন করে সব ভেঙে দিচ্ছিলো তখন আমি ওদের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। আমি একটা সিস্টেম তৈরি করতে বলেছি। কোভিডের পর যারা বসেছেন আমি তাদের বিষয়টা বলেছি। হকারিটাও একটা ব্যবসা। তাদের পরিবারের কথাও আমাদের ভাবতে হবে।” আরও বলেন, “যে যার ইচ্ছামতো প্লাস্টিক জমা করে রেখে দিচ্ছে। একটা গোডাউন বানিয়ে রেখে দিচ্ছে। স্টলের পাশে গোডাউন বানিয়ে রাখার অধিকার কারও নেই। তা সে যত বড় নেতাই হোক।”
আরও পড়ুনঃ কাজ ফুরোলেই পাজি, কেন গরিবের পেটেই লাথি মারে শাসক
এতেই শেষ নয়। হকারদের নিয়ে নতুন কী আইন করা হয়েছে সেই সম্বন্ধেও জানান মমতা। তাঁর কথায়, “আমরা হকারদের জন্য একটা আইনও করেছি। ১২৮ টি লোকাল বডিতে টাউন ভেন্ডিং কমিটি তৈরি করা হয়েছে। ১০৪৫ টি ন্যাচারাল মার্কেট ও ৪০৮৭ টি হেরিটেজ মার্কেট রয়েছে। হকারদের আইনি বৈধতা দেওয়ার জন্য আমি একটা কার্ড তৈরি করতে বলেছিলাম।” আরও বলেন, “হকার নেতারা চাঁদা তুলে বেআইনিভাবে ডালা বসিয়ে দেবেন। এসব করবেন না। ভিডিও সার্ভে করা হয়েছে। একজনের একাধিক ডালা থাকবে তা হতে পারে না। বহিরাগত নয়। হকার বাজার দেখতে সুন্দর করতে হবে। কর্পোরেশনের গায়ে পর্যন্ত হকার বসে গিয়েছে। লোক্যাল কাউন্সিলররা দেখেও দেখে না। ফায়ার ফ্রি মেটিরিয়াল দিয়ে স্টল করে দিন। ববিকে (ফিরহাদ হাকিম) বলছি স্টলগুলোর জন্য আলাদা করে মেটিরিয়াল রাখার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হোক, যেখানে সবাই তাদের জিনিস পত্র রাখবে। একটা ডেডিকেটেড বিল্ডিংয়ে তারা রাখবে তাদের মাল। একটা সিস্টেম তৈরি করতে হবে।”
এরপরই মুখ্যমন্ত্রী জানান, “লক্ষ লক্ষ মানুষ কিন্তু হকারি করে খায়। প্রত্যেকটা মিউনিসিপ্যালিটি একই নিয়মে চলবে। প্রত্যেকটা হকার জোনের পাশে একটা করে বিল্ডিং রাখবে যেখানে হকার ভাইরা তাদের জিনিস রাখবে।” আরও বলেন, “ডাল ভাত মাছ খেয়ে কি সন্তুষ্ট হচ্ছে না? খেতে কি লাগে? বাঁচার অধিকারের জন্য যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু কাজে লাগান। লোভ সম্বরন করুন। লোক্যাল কাউন্সিলর—
যে কাউন্সিলরের এলাকায় এটা চলবে সেই কাউন্সিলর আগে অ্যারেস্ট হবে। দেখেছেন আমি ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির আমাদের ব্লক সভাপতিকে অ্যারেস্ট করিয়েছি। একটি দল পুকুর ভরাট করে বাড়ি তৈরি করে ফেলেছে। আমাকে মলয় বললো। কিন্তু কী করে করল? তৃণমূলের হলে তো ভেঙে ফেলা হয়। তাহলে আরএসএস এটা কিভাবে করল? পুলিশ, আরবান দফতরের সেক্রেটারি দরকার হলে প্রতিটা জেলা ভিজিট করবেন। বাংলাদেশের একজন এমপিকে কীভাবে খুন করা হলো!”
পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “সরকারি জমি দখল করে বাড়ি করছে। আমরা যখনই টেক ওভার করতে যাচ্ছি তখনই কোর্টে চলে যাচ্ছে আর স্টে নিয়ে চলে আসছে। আমি মলয়, ববি, অরূপ, চন্দ্রিমাকে বলছি এটা দেখতে হবে। মানুষের জীবন আগে। জগুবাবুর বাজার এলাকা দিয়ে যেতে গিয়ে দেখলাম। ওটা কেন সারানো হচ্ছে না। যদি মালিক না সারায় তাহলে আমরাই তো সেটা করে দিতে পারি।” যোগ করেন, “(১) বিল্ডিং। (২) বাজার হয়তো দোতলা আছে, সেটাকে তো আমরা চারতলা করতে পারি। আর একটাই ডিপিআর হবে। এমন নয় যে আলাদা আলাদা এলাকার জন্য আলাদা আলাদা ডিপিআর করা হবে আর টাকা খাওয়া হবে। না, সেটা হবে না। (৩) বেআইনি পার্কিং জোন। পুলিশ নেতাদের টাকা খাইয়ে অনেক জায়গায় এমন বেআইনি পার্কিং জোন করেছে। সবচেয়ে বেশি বেআইনি পার্কিং এখন বিজেপির আছে। আমাদের লোকেরাই টাকা খেয়ে দিয়ে দিচ্ছে।”
এরপর মুখ্যমন্ত্রী শহর পরিষ্কার রাখার প্রসঙ্গ তোলেন। “আবর্জনা রাস্তায় ফেলা যাবে না। ইটস অ্যা ক্রাইম। এটায় ফাইন করতে হবে। আপনারা কি ভাবেন কলকাতা কি এমনি এমনি এত সুন্দর হয়ে গিয়েছে? আমি দশটা দফতরকে নিয়ে এটা করেছি তখনকার মেয়রকে দিয়ে। আমি তিনমাস সময় দিচ্ছি হকার জোন করার জন্য। দয়া করে আমার কাছে প্ল্যানটা পাঠান। কলকাতার আইডেন্টিটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সল্টলেক, রাজারহাটের আইডেন্টিটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”
মুখ্যমন্ত্রী এদিন রেয়াত করেননি পুলিশকেও। বলেন, “পুলিশের মধ্যে আমি দেখছি একটা লোভ বেড়ে গিয়েছে। কোনও পুলিশ যদি ইন্ধন দেয় তাহলে আমি অ্যাকশন নেব। যা হয়েছে হয়ে গিয়েছে। আর নতুন করে ভুলের কোনো দরকার নেই। পুজো আসছে সামনে। এখন থেকেই চেক করুন কে কী করছে। বাইরে থেকে এবারও প্রচুর লোক আসবে। যেন স্ট্যামপেড না হয়ে যায়।” আরও বলেন, “আমার দল সরকারের টাকা নিয়ে একটাও কাজ করে না। এটা বিজেপি করে। কন্ট্রাক্টর সরকারের কাছ থেকে এক হাতে টাকা নিচ্ছে আর অন্য হাতে বিজেপিকে দিয়ে দিচ্ছে। রাজীব একটা পোর্টাল তৈরি করবে। কোথায় হকিং জোন হবে না হবে। যে লোকগুলোকে ইতিমধ্যেই সরিয়ে দিয়েছে তাদের একটা তালিকা তৈরি করতে হবে।লোক্যাল পুলিশ ই এটা করতে পারে। দেখতে হবে তারা লোকাল কি না। তাদের সত্যিই আর কোনও রোজগারের পথ আছে কি না।
শেষে নীল-সাদা রং নিয়েও বলতে শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। বলেন, “উত্তরবঙ্গে গিয়ে দেখলাম যত বাড়ির ছাদ হয় লাল নয়ত গেরুয়া করে দিয়েছে। এটা গোপালিকাকে দেখতে বলছি। নবান্নের রংটাই সবাইকে পাঠাতে হবে।”