বিশ্বদীপ ব্যানার্জি: বিগত এক দশক ধরে নকআউট, বিশেষ করে সেমিফাইনাল যেন আতঙ্কের আরেক নাম টিম ইন্ডিয়ার কাছে। বৃহস্পতিবার আরো এক সেমিফাইনাল। গায়ানায় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে (IND vs ENG) টি-২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নামতে চলেছে রোহিত শর্মা এন্ড কোং। গত ২০২২ টি-২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেও মুখোমুখি হয়েছিল এই দুই দল (IND vs ENG)। সেই ম্যাচে ভারতকে ১০ উইকেটে পরাভূত করে ফাইনালে উঠেছিল জস বাটলারের ইংল্যান্ড। শেষপর্যন্ত পাকিস্তানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নও হয় তারা।
আরও পড়ুনঃ বোর্ডে ১২০ রান থাকলেই ফাইনাল খেলত আফগানিস্তান
তবে এবারের পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা। গত বিশ্বকাপের তুলনায় এবারে অনেকটাই ছন্দে মেন ইন ব্লু। চলতি টুর্নামেন্টে এখনও অবধি একটিও ম্যাচ না হেরে সেমিফাইনালে পৌঁছে গিয়েছে তারা। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জসপ্রীত বুমরাহ চোটের জন্য থাকতে পারেননি। এবারে তাঁর উপস্থিতি আমূল বদলে দিয়েছে ভারতীয় বোলিংকে। এ অবস্থায় ইংরেজদের পক্ষে ভারতকে হারানো যে খুব একটা সহজ হবে না তা বলে দেওয়াই যায়।
ভারতের জন্য অবশ্য আরেকটি অ্যাডভান্টেজ-ও রয়েছে। যা হল গায়ানায় দফায় দফায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস। বৃষ্টি যদি এদিনের সেমিফাইনাল (IND vs ENG) ভেস্তে দেয় সেক্ষেত্রে সুপার এইটে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে সরাসরি ফাইনালে চলে যাবে টিম ইন্ডিয়া। কারণ, এই ম্যাচের জন্য কোনও রিজার্ভ ডে বরাদ্দ করেনি আইসিসি। তবে বৃষ্টি যদি নাও হয়, যদি পুরো ম্যাচও হয়, সেক্ষেত্রেও এগিয়ে থাকবেন রোহিতরা। মূলতঃ তিনটি কারণে এগিয়ে থাকবেন তাঁরা। চলুন দেখে নেওয়া যাক সেই কারণ তিনটি কী কী।
মিডল অর্ডারঃ
বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে (IND vs ENG) ব্রিটিশদের ভোগাতে পারে তাদের মিডল অর্ডার। বিশেষ করে, বড় দলের বিরুদ্ধে রান তাড়া করার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ মিডল কার্যত ব্যর্থই বলা যায় চলতি বিশ্বকাপে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রাথমিক পর্বের খেলায় ২০২ তাড়া করতে নেমে একটা সময় ৭ ওভারে তাদের স্কোর ছিল বিনা উইকেটে ৭৩। সেখান থেকে ১৬৫/৬ এ শেষ হয় ইনিংস। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সুপার এইটের ম্যাচে ১৬৪ রান তাড়া করতে পারেননি জস বাটলাররা। যে কয়টি ম্যাচ এই প্রতিযোগিতায় ইংল্যান্ড জিতেছে, তার প্রায় সবকটিই টপ অর্ডারের ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ের সুবাদে। উল্টোদিকে টিম ইন্ডিয়ার গল্পটা কিন্তু একেবারেই আলাদা। ওপেনার রোহিত অজিদের বিরুদ্ধে ৪১ বলে ৯২ করলেও মূলতঃ মিডল অর্ডার-ই চলতি বিশ্বকাপে টানছে ভারতকে। গোটা প্রতিযোগিতাজুড়েই ওপেনিংয়ে আসা বিরাট কোহলি চূড়ান্ত ব্যর্থ। এই অবস্থায় হয় ঋষভ পন্থ নয়ত সূর্যকুমার যাদব আর নয়ত হার্দিক পাণ্ডিয়া, রোজ কেউ না কেউ ঠিকই খেলে দিচ্ছেন।
বোলিংয়ের ধারঃ
বোলিংয়ের ক্ষেত্রেও বুমরাহ্-অর্শদীপরা অন্ততঃ কয়েক যোজন এগিয়ে থাকবেন ইংরেজ বোলারদের থেকে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কে মাত্র ১১৯ রান ডিফেন্ড করেছিল ভারতের বোলিং ইউনিট। এই জয় যে বুমরাহ্দের বাড়তি আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এবারে বাঁহাতি চায়নাম্যান কুলদীপ যাদব দলে যোগ দেওয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের মন্থর পিচে ভারতীয় বোলিংয়ের ধার আরওই বেড়েছে। ছন্দে রয়েছেন আরেক স্পিনার অক্ষর প্যাটেল-ও। পাশাপাশি ষষ্ঠ বোলারের ভূমিকা হার্দিকও খুব ভালোভাবেই সামলাচ্ছেন। এই অবস্থায় সল্ট, বাটলার এবং বেয়ারস্টো সমন্বিত ইংল্যান্ডের টপ অর্ডারকে পেড়ে ফেলতে পারলেই বাকি কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। ভয় শুধু রবীন্দ্র জাদেজাকে নিয়েই। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১ ওভারে ১৭ রান খরচ করার পর তাঁকে আর পুনরায় ফেরত আনেননি অধিনায়ক রোহিত।
খাস খবর ফেসবুক পেজের লিংকঃ https://www.facebook.com/share/434buqMrZ98y4kma/?mibextid=qi2Omg
বড় ম্যাচে পারফরম্যান্সঃ
চলতি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের ব্যাটাররা একাধিকবার দাদাগিরি দেখিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু মনে রাখতে হবে সেগুলোর বেশিরভাগই কমজোরী দলের বিরুদ্ধে। সেই অর্থে বড় দলের বিরুদ্ধে দুবার খেলেছেন ইংরেজরা। দুটি ম্যাচেই হার স্বীকার করতে হয়। যথাক্রমে প্রাথমিক পর্বে অস্ট্রেলিয়া এবং সুপার এইটে প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে। এদিকে বড় দলের বিরুদ্ধে ভারতের পারফরম্যান্স কিন্তু একেবারেই তেমন নয়। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মাত্র ১১৯ রান করেও ম্যাচ ছিনিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি তারা অস্ট্রেলিয়ার মত দলকেও হারিয়েছে সুপার এইট পর্বে। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে ট্র্যাভিস হেড যতক্ষণ ব্যাট করছিলেন, যথেষ্টই চাপে ছিলেন রোহিতের বোলাররা। কিন্তু চাপের মুখে ভেঙ্গে পড়েননি তারা। স্নায়ুর ওপর নিয়ন্ত্রণ রেখে শেষ পর্যন্ত জয় ছিনিয়ে নেন।