বিশ্বদীপ ব্যানার্জি: লেগে থাকলে সাফল্য আসবেই। নাকি এই খুশির মুহূর্তে সুর করে গাইতে হবে? “হাল ছেড়ো না, বন্ধু….”
আরও পড়ুনঃ T20 World Cup: রুদ্ধশ্বাস জয় ভারতের, শুভেচ্ছা জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
২০১৩ সালের ২৩ জুন। এজবাস্টনে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিজেদের পকেটে পুরেছিল ধোনির ভারত (Team India)। আশ্চর্যজনকভাবে ঠিক ১১ বছর ৬ দিন পর ট্রফির খরা কাটল একেবারে এজবাস্টন ফাইনালের ভঙ্গিতেই। সেদিন একটা সময় ব্রিটিশদের ১৬ বলে দরকার ছিল ২০। সেখান থেকে ইশান্ত শর্মার পরপর দুটো বল ট্রফি এনে দেয়। এদিন ইশান্তের জায়গায় বুমরাহ্। আর প্রোটিয়াদের সমীকরণ ছিল ৩০ বলে ৩০; হাতে ৬ উইকেট।
বার্বাডোজের ফাইনালে অন্য কোনও দল থাকলে এই জায়গা থেকে হয়ত চেষ্টা করেও হারতে পারত না। দক্ষিণ আফ্রিকা বলেই পারল কি না এই প্রশ্ন কিন্তু আজ আর উঠবে না। কারণ তাদের উল্টোদিকে যেই দলটি (Team India) ছিল তাদের সামনে যে কোনও দল চোক করে যেতে বাধ্য। যার ঝলক মিলেছিল পাকিস্তান ম্যাচেই। বুমরাহ্-হার্দিকদের সামনে ১২০ রানও তাড়া করতে পারেননি বাবররা।
যে দল ১১৯ ডিফেন্ড করে, ১৭৬ রানের পুঁজি তো তাদের কাছে বিলাসিতা। সে যতই হেনরিক ক্লাসেনের বেধড়ক পিটুনিতে দক্ষিণ আফ্রিকা ১৫ ওভার শেষে ১৪৭/৪ থাকুক না কেন। আসলে তাদের হার তখনই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল যখন সারা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ১০০ রানও না পেরোনো বিরাট ফাইনালে ৫৯ বলে ৭৬ করে গেলেন। যদিও কিং কোহলির এই ইনিংসের থেকেও বড় ইমেজারি হয়ে রইল ম্যাচের সেরা পুরস্কার নিতে গিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে বিদায় ঘোষণা। মহাতারকারা তো বিদায়ের জন্য মহামঞ্চই বেছে নেন।
বিরাটও নেবেন তাতে আর আশ্চর্যের কী আছে? যদিও বিদায় বেলাতেও কার্যত ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে তাঁর মাত্র ১২৮ স্ট্রাইক রেটের ইনিংস নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। জিতে গেলে কে আর ত্রুটি নিয়ে ভাবে? তবু বিরাটের বেলায় ভাবতে বাধ্য হচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা। বিরাট বলেই ভাবতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ অক্ষর প্যাটেলের ৩১ বলে ৪৭ আর শেষের দিকে শিবম দুবের ১৬ বলে ২৭ না এলে এবারেও ট্রফি অধরা থেকে যেত। ঠিক যেমন শেষ ওভারে ডেভিড মিলারের অবিশ্বাস্য ক্যাচ না লং অফ বাউন্ডারি সূর্য কুমার যাদব না ধরলেও অধরা থেকে যেত ২০০৭ এর পর দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি শিরোপা।
১৯৮৩ বিশ্বকাপে কপিল দেবের সূর্য রশ্মিকে ধোঁকা দিয়ে সেই অবিশ্বাস্য ক্যাচ বর্তমান প্রজন্ম লাইভ দেখেনি। এদিন সূর্যের ক্যাচ তারা দেখে নিল। যা সর্বকালের সেরা ক্যাচ বললেও অত্যুক্তি হবে না পরিস্থিতির বিচার। ৬ বলে বাকি ১৬, সমীকরণটা দেখতে বোলিং দলের সমর্থকদের ভাল লাগতেই পারে। কিন্তু মিলার শেষ পর্যন্ত থেকে গেলে যে শেষ বল অবধিও খেলা গড়াত না, তা আর বলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এই অবস্থায় ক্যাচ নিয়েও তা ছুঁড়ে দিয়ে বাউন্ডারি লাইনের বাইরে চলে যাওয়া, তারপর ফের ফিরে এসে ক্যাচ কমপ্লিট করা, একে সর্বকালের সেরা ক্যাচের তকমা দেওয়া ছাড়া সত্যিই আর কোনও উপায় আছে কি?
ব্যাট হাতে এদিন কিছুই করতে পারেননি সূর্য। যেমন অধিনায়ক রোহিতও অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে কার্যত আত্মহত্যা করলেন মাত্র ৯ রানেই। এরপর মাত্র দু’বল খেলে প্যাভিলিয়নে ঋষভ পন্থ-ও। শেষ পর্যন্ত ভরসা ছিল বোলাররাই। কথাতেই রয়েছে, ব্যাটার ম্যাচ জেতায় কিন্তু টুর্নামেন্ট জেতায় বোলারই। বিশেষ করে ভারতীয় (Team India) বোলাররা গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে এই যে পারফর্ম করে গিয়েছেন তাতে ব্যাটিং সহায়ক বার্বাডোজের উইকেটে মাত্র ১৭৬ তোলার পর তাঁদের ছাড়া জয় কোনও মতেই সম্ভব ছিল না।
এই উইকেটে স্পিনারদের জন্য সেই অর্থে কোনও বিশেষ সুবিধা ছিল না টার্ন সেভাবে না থাকায়। তাই অক্ষর প্যাটেল স্টাবসকে আউট করলেও কুলদীপ ৪ ওভারে দিলেন ৪৫ এবং জাদেজা ১ ওভারে ১২। শেষপর্যন্ত বুমরাহ্-ই ফারাক গড়ে দিলেন। ৪ ওভারে ১৮ রানে ২ উইকেট। এটা শুধুমাত্র পরিসংখ্যান হিসেবে লেখা থাকবে। কিন্তু বুম বুমের ইম্প্যাক্ট তার থেকেও অনেক অনেক বেশি।
৩০ বলে বাকি ছিল ৩০। ১৬ তম ওভার করতে এসে দিলেন মাত্র ৪। এখানেই যেন প্রোটিয়াদের হার পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে যায়। এরপর হার্দিক এসে প্রথম বলেই ক্লাসেনকে ফিরিয়ে দেওয়া যেন ছিল অবশ্যম্ভাবী।
খাস খবর ফেসবুক পেজের লিংকঃ https://www.facebook.com/share/UqF1b7TViFyvfPhN/?mibextid=qi2Omg
আসলে যোগ্য দলই (Team India) সারা টুর্নামেন্টে অপরাজেয় থেকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হল। যশস্বী জয়সওয়াল, যুজবেন্দ্র চাহলরা স্কোয়াডে থেকেও ম্যাচ খেলার সুযোগই পেলেন না। আর যাঁরা পেলেন, তারা প্রত্যেকে কিছু না কিছু অবদান রেখেছেন। অধিনায়ক রোহিত, বিরাট, হার্দিক, সূর্য কুমার, বুমরাহ্, অর্শদীপ, কুলদীপ, অক্ষর, জাদেজা, দুবে— কে নয়! বিশ্বকাপ তো এভাবেই জিততে হয়!
বছর ১৭ আগে এই ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ-ই খালি হাতে ফিরিয়ে দিয়েছিল অধিনায়ক দ্রাবিড়কে। আজ যে তাঁরও শাপমুক্তির দিন। কিন্তু তিনি তো জানতেনই, ট্রফি এলেও তাঁকে সরে যেতে হবে। সাধে কি শেষ বল হয়ে যেতেই ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন! আর তারপর ট্রফি হাতে নিয়ে রোহিতরাও। অথচ ভাবতে কেমন অবাক লাগে এই দলকে নিয়ে নাকি একটুও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেনি ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকরা। বরং তারা নিশ্চিত ধরেই নিয়েছিল এইবারে অন্ততঃ ট্রফি আসছে না। এবারেই এল। আর কীভাবে? না বলে পারা যাচ্ছে না, রোহিতদের হারানো মুশকিল হি নেহি, না মুমকিন হ্যায়!