সৌমেন শীল, কলকাতা: দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস নিয়ে ভারত তথা বিশ্বের কৌতুহলের অন্ত নেই। সেই বীর বাঙালি সন্তানের ১২৫ তম জন্মজয়ন্তী পালন ঘিরে শুরু হচ্ছে উৎসব। যার প্রাককালে বিস্ফোরক দাবি করলেন নেতাজিকে নিয়ে গবেষণা করা বিশিষ্ট বাঙালি আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন- নেতাজি জন্মজয়ন্তী উদযাপন কমিটিতে একগুচ্ছ বাঙালিকে ঠাঁই দিলেন মোদী
অন্তর্ধানের পরে নেতাজি নাকি দেশে ফিরে এসেছিলেন। উত্তরপ্রদেশে ছিলেন সাধুর বেশে। সেই সাধুর কাছে নিত্য যাতায়াত ছিল আজাদ হিন্দ ফৌজের সদস্য-সহ নেতাজির ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের। সেই গুমনামী বাবা নাকি আদতে নেতাজি ছিলেন। এই নিয়ে জল্পনা জারি হয়েছিল দীর্ঘদিন আগে এই নিয়ে কমিশন গঠিত হয়েছিল। বিতর্কও হয়েছে অনেক।
অনেকেই গুমনামী বাবাকে নেতাজি বলে দাবি করেছিলেন। যদিও সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন নেতাজি গবেষক হয়দীপ মুখোপাধ্যায়। তিনি দাবি করেছেন যে গুমনামী বাবা ছিল তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের ষড়যন্ত্র। যার পিছনে ছিলেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু এবং অপর প্রধানমন্ত্রী তথা নেহরুতনয়া ইন্দিরা গান্ধী। যাঁকে অনেকেই নেতাজির শত্রু এবং সুভাষের অন্তর্ধানের জন্য কাঠগড়ায় তোলা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন- ‘দলে এখন ছেড়ে দে মা অবস্থা,’ রাজীবের পাশে দাঁড়িয়ে মন্তব্য বৈশালীর
নেহরু সংক্রান্ত বিতর্কে না গিয়ে জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “১৯৫৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নেহরু তৎকালীন আইবি চিফ ভোলানাথ মল্লিককে একটি নোট লেখেন। যেখানে নেতাজির ডামি তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তারপরেই শৈলমারি সাধুর আবির্ভাব হয়। যাকে নেতাজি বলে প্রতিষ্ঠা করার দাবি উঠেছিল। এরপরে ১৯৬৪ সালে নেহরুর মৃত্যু হতেই উধাও হয়ে যায় সেই বাবা।”
এখানেই সাধুর বেশে নেতাজির আবির্ভাবের তত্ত্ব চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিল কংগ্রেস পরিচালিত কেন্দ্র সরকার। তেমনই দাবি করেছেন জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, “ইন্দিরা গান্ধীর মস্তিস্ক প্রসূত ছিল গুমনামী বাবা। যিনি ৩০ বছর পর্দার আড়ালে থেকেছেন। যে বাবা ১৯৮৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মারা যান, কিন্তু তাঁর কোনও সৎকার বা মৃত্যুর প্রমাণ নেই।” ঘটনাচক্রে ১৯৮৪ সালে প্রয়াত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।
আরও পড়ুন- নতুন ভারত গড়ে তোলায় প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ মুখ্যমন্ত্রী
শুক্রবার আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায় তাঁর নেতাজি সংক্রান্ত গবেষণাধর্মী লেখা নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেন। সেই অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে নেতাজিকে নিয়ে একগুচ্ছ দাবি জানিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে দিল্লির অধীনে থাকা নেতাজি সংক্রান্ত ৪১টি ফাইল প্রকাশ করা। সেই সঙ্গে রাশিয়ার গুপ্তচর সংস্থা কেজিবি-র হাতে থাকা নেতাজি সংক্রান্ত ফাইল জনসমক্ষে আনা।
অনেকে বলে থেকেন যে ওই সকল ফাইল প্রকাশিত হলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বহু দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ হবে। সেই সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে হিংসা ছড়াতে পারে। যদিও সেই আশঙ্কা উড়িয়ে জয়দীপবাবু বলেছেন, “৭৫ বছর ধরে একজন নিখোঁজ। তাঁকে নিয়ে এখন আর কোনও সমস্যা হবে না। প্রকৃত সত্য সকলের জানা উচিত।”
আরও পড়ুন- প্রতিবাদসভা থেকে থানার আইসিকে হুঁশিয়ারি তৃণমূল সভাপতির
এছাড়াও আরও কতগুলি দাবি করেছেন অল ইন্ডিয়া লিগাল এইড ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, “আজাদ হিন্দ ফৌজ এবং সুভাষ চন্দ্র বোস দেশের সব স্কুলের সিলেবাসে যুক্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে নেতাজির জন্মদিনকে দেশপ্রেম দিবস হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।” এছাড়াও আজাদ হিন্দ ফৌজের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির গায়েব হওয়া নিয়ে তদন্ত কমিশন গঠনের দাবিও তুলেছেন আইনজীবী জয়দীপ।