তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল: ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভোগেন ভারতের দেড় কোটি মানুষ। এক বছরে ৭৮ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ যায় এই রোগে। আর করোনা আবহে তাঁদের উপরে যেন বিপদের মাত্রা আরও বেড়েছে। যার জেরে চিকিৎসকদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
করোনা মহামারির প্রকোপ বছর ভর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু এই মহামারির প্রভাবে হারিয়ে যায়নি নন-কোভিড রোগ। তাই ক্যানসার যেমন ছোবল মারে, তার তীব্রতা এক রকম রয়েছে। আর ক্যানসার আক্রান্তদের ভোগান্তি বেড়েছে কয়েক গুণ।
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ক্যানসারের চিকিৎসার মূলত দুটি পর্যায় থাকে। প্রথমটি অস্ত্রোপচার এবং পরেরটি রেডিওথেরাপি। ক্যানসার ছড়িয়ে পড়া দেহের অংশকে অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু দেহের বাকি অংশ সুস্থ রাখতে রেডিওথেরাপি খুব জরুরি। তাই ক্যানসারের বীজ লুকিয়ে থাকা কোষগুলো রেডিওথেরাপির মাধ্যমে নষ্ট করে দেওয়া হয়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের কয়েক মাসের মধ্যেই চিকিৎসকেরা এই প্রক্রিয়া শুরু করার পরামর্শ দেন। প্রয়োজন মাফিক রোগী কয়েক মাসের মধ্যেই এই থেরাপি নেওয়া শুরু করেন। কিন্তু এই প্রক্রিয়া বেশ দীর্ঘ মেয়াদি। তাই রোগীকে বারবার হাসপাতালে যেতে হয়। আর তাতেই বাড়ছে বিপদ।
কলকাতার একাধিক হাসপাতাল সূত্রে জানা যাচ্ছে, করোনা আবহে রেডিওথেরাপি করাতে এসে অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ সহ একাধিক হাসপাতাল বেশ কয়েক মাস ক্যানসার চিকিৎসা বন্ধ রেখেছিল। ক্যানসার আক্রান্তদের সংক্রমণের ঝুঁকির কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার ফলে সমস্যা আরও জটিল হচ্ছিল। একদিকে রোগীদের অনেক বেশি অপেক্ষা করতে হচ্ছিল। তাঁদের চিকিৎসা শ্লথ হয়ে পড়েছিল। যা তাঁদের পক্ষে ক্ষতিকারক। তাই নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা করার অনুমতি পাওয়ার পরেই সব হাসপাতালে ফের ক্যানসার চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু এরপরেই বাড়তে থাকে সংক্রমণ।
অধিকাংশ হাসপাতালে করোনা রোগী ও অন্যান্য রোগীদের যাতায়াতের একটি পথ রয়েছে। অনেক সময়েই করোনা আক্রান্তকে যাঁরা ভর্তি করাতে আসছেন, তাঁরাও রোগীকে শিকার। অনেকক্ষেত্রে তাঁরা সে বিষয়ে টের পাচ্ছেন না। ফলে, হাসপাতাল চত্বরে একসঙ্গে থাকা, বসার জেরে রোগের দাপট বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, কোমরবিটি থাকা রোগীদের বিপদ আরও বেশি। অর্থাৎ, ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার, কিডনির অসুখ কিংবা হাঁপানির মতো সমস্যায় ভোগা রোগীদের তাড়াতাড়ি করোনা কাবু করছে।
ক্যানসার আক্রান্তেরা রেডিওথেরাপি নেওয়ার সময় তাঁদের সঙ্গে যে চিকিৎসক, নার্স কিংবা স্বাস্থ্য কর্মীরা থাকছেন, অনেক সময় তাঁদের থেকেও রোগ সংক্রমিত হচ্ছে। ফলে, তাঁদের প্রাণ সংশয় দেখা দিচ্ছে।
চিকিৎসকদের একাংশের পরামর্শ, ক্যানসার আক্রান্তদের মধ্যে করোনা প্রকোপ খুব উদ্বেগজনক। দেশে করোনা টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। তাই ক্যানসার আক্রান্তদের জরুরিভিত্তিতে টিকা দেওয়া হোক। তবেই তাঁদের প্রাণের ঝুঁকি কিছুটা কমবে।