খাসখবর ডেস্ক: বাংলা টেলিভিশনের একাধিক ‘স্ট্যান্ডআপ কমেডি’ শো তে দেখা গিয়েছে তাঁকে৷ কয়েক বছর আগে মোদী সরকারের বিরোধিতা করে প্যারোডি লিখে আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। ‘কিচ্ছু চাইনি আমি…’ এবং মোদীকে নিয়ে প্যারোডি লিখে খ্যাত দীপাংশু আচার্যর বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ আনলেন তাঁর প্রাক্তন প্রেমিকা৷
সম্প্রতি ফেসবুকে শ্রেয়সী লিখেছেন, ‘২০০৯-এর বইমেলা পরবর্তী ৪ মাস আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়গুলির একটি। ২০০৮-এর নভেম্বর থেকে আমার সাথে দীপাংশুর ‘সম্পর্ক’ শুরু। আমি আদৌ সম্পর্কে যেতে রাজি ছিলাম না প্রথমদিকে। থাকার কথাও না, কিন্তু শেষে রাজি হই। ভুল করি। ডিসেম্বর থেকে দীপাংশু নানা মানসিক উৎপীড়ন শুরু করে, জানুয়ারিতে বইমেলা, সকলের সামনে বারে বারে অপদস্ত করে আমাকে। তৎকালীন বন্ধুবান্ধবরা সকলে চোখের সামনেই দেখেছে।’
এরপর তিনি তাঁর সঙ্গে হওয়া নির্যাতনের ঘটনার আরও বর্ণনা দিয়ে লেখেন, ‘বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে অপদস্ত করা। লেখার খাতায় আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিতে গিয়ে প্রায় অগ্নিকাণ্ড ঘটানো। বাথরুমে নিজেকে আটকে ফেলে আত্মহত্যার ভয় দেখানো। ফোন করে বলা, ‘২৪০ বাস আসছে, শুনতে পাচ্ছিস তো আওয়াজ, এক্ষুনি দেখা কর নাহলে সামনে চলে যাবো’। এখনো মনে আছে কোথায় দাঁড়িয়ে ছিলাম যখন এই কথাটা শুনি। কোনোদিন ভাবতেও পারিনি। তখন ২০০৯, আমার ১৯ বছর বয়েস। জীবনে প্রথম সম্পর্কে জড়ানো।
২০০৯-এর শুরুর দিকে, ফেব্রুয়ারি বা মার্চ, আমাকে ফোন করে নিজের মায়ের ফোন থেকে, একই কথা – ‘তিন্নি ফিরে আয়, নাহলে এক্ষুনি আত্মহত্যা করবো।’
বইমেলার পর থেকেই আমি চেষ্টা শুরু করি এই মারণফাঁদ থেকে বেরোনোর। তখন তো অ্যাবিউস সাইকেল বুঝতাম না। জাস্ট টিকে থাকা যাচ্ছিলো না তাই, বেরোতে চাইছিলাম। কিন্তু পারছিলাম না।
বইমেলার পর আমাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়, তবু আমি যেখানে যাই দীপাংশু ফলো করে। স্টক করে। আমি যাদের সাথে কথা বলি, তাদের শাসায়, তাদেরকে রাস্তায়ঘাটে হেনস্থা করে।
প্রায় প্রতিদিন বাড়ি চলে আসে, এবং দরজা ধাক্কায়, ধাক্কা দিয়েই চলে। ক্ষমা চায়, বলে আর কখোনো হবে না। দুঘন্টা বাদে আবার মারে, ছেঁড়েখোঁড়ে, ভাঙে। ‘
ওই পোস্টেয় শ্রেয়সী আরও লিখেছেন,
‘বলে, খুব নেশা করেছি, তাই এমন হচ্ছে। (আমি বিশ্বাস করি, বলি নেশা ছেড়ে দে তবে।)
বলে, কাজ নেই, তাই এমন হচ্ছে।
(আমি বিশ্বাস করি৷ কাজ খুঁজতে বলি, ওর বন্ধুরা ওকে কাজ খুঁজে দেয়, তাদের ফোন ধরে না, তারা আমাকে ফোন করে, আমি দীপাংশুকে ডাকতে যাই, উঠে সপাটে চড়।)
বলে, খুব স্ট্রেস নিচ্ছিস, তাই তোর ওপর রাগ হচ্ছে, তাই এমন হচ্ছে। (আমি বিশ্বাস করি, স্ট্রেস কম নেয়ার চেষ্টা করি। দীপাংশু যা যা বলছে তাই করি। ১) দীপাংশুর কোম্পানিতে চাকরি। ২) দীপাংশুর সঙ্গে কবিতা লেখা৷ ৩) দীপাংশু ছাড়া অন্য সকলের সাথে বন্ধুত্ববিচ্ছেদ করা। ৪) পুরুষ বন্ধুদের আলাদা করে হেনস্থা করা – নইলে মার খাবো।)
আমাকে বলা, “ভাগ্যিস তোর সঙ্গে প্রেম করেছি, নাহলে কোথাও নালা নর্দমায় পড়ে থাকতিস।” পুরুষ বন্ধুদের সাথে কথা বা দেখা হলে, আমার বাড়িতে এসে আমার জিনিস পত্র ভাংচুর করা, থাপ্পড় মারা, কিল, চড়, ঘুঁষি। মুখ টিপে ধরা, গলা টিপে ধরা। লাথি মারা।
আমার যোনিতে অবধি লাথি মেরেছে এই ছেলেটি। আরেকদিন দুপুরবেলা, ২০০৯ এর এই মার্চ এপ্রিল করে, খুব ভায়োলেন্ট হয়ে পড়েছে দীপাংশু বলে আমি আত্মরক্ষার্থে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে মা বাবার ঘরে গিয়ে দরজা আটকে ছিটকিনি দিয়ে দিয়েছি। দরজা পাগলের মত ধাক্কা দয়ে চলেছে। আমি ভয়াবহভাবে ট্রমাটাইজড। মনে রাখতে হবে, এটা আমার বাড়ি, আমি পালিয়ে যাওয়ার জায়গাও খুঁজে পাচ্ছিনা। দরজায় ধাক্কা দিতে দিতে, দরজা ভেঙে আমার ডান পায়ের বুড়ো আঙুলের উপর দিয়ে চালিয়ে দিয়েছে দরজাটিকে। আমার ডান পায়ের নখ এখনো পুরোপুরি গজায় নি। আজ প্রায় ১২ বছর পরেও। মে মাসে আমি প্রায় পালিয়ে যাই ব্যাঙ্গালোরে। কবিতা ইত্যাদি লেখার সূত্রে যেহেতু এই ছেলেটির সাথে আলাপ, যেহেতু আমার গোটা বন্ধুমহলই এর বন্ধু, ফলে এসব ছেড়ে পালানো ছাড়া গতিও ছিলো না। যতদিন কলকাতায় ছিলাম আমার বাড়ি বয়ে এসে চিৎকার, চ্যাঁচামিচি, হেনস্থা করে গেছে। ওদের হেনস্থার একটা নমুনা দিই, বইমেলাতে আমার একখানা বই বেরিয়েছিলো একবার, সেই পাব্লিশার্সের স্টলের দেওয়ালে গিয়ে মুত্রত্যাগ করে আসা৷ তারপর ২০০৯ এর সেই প্রেমের রেশ চলে ২০১২ অবধি। তিন বছর আনাকে স্টক করে যায় রি ভয়ানক টক্সিক ছেলেটি। তারপর দেখি বন্ধুমহল আবার মেনে নিয়েছে তাকে। আস্তে আস্তে নিজেকে বোঝাই, ঠিকই আছে ভুল করেছে। এখন আর করে না। (ততদিনে দীপাংশু বিপশ্যনা করে নাকি অন্য মানুষ, গীতা অনুবাদ করছে, বলছে হত এবং হন্তা দুইই বিষ্ণু বা ওই গোছের কিছু।)
তারপর আবার আবার আবার করেছে। একই জিনিস। বার বার। আমার চোখের সামনে।
এতদিনে কেন বলছি? কারণ এটা আলাদা করে বলতে হবে সত্যিই বুঝিনি, তাই ‘বলার মতো করে’ বলিনি। ভেবেছিলাম সর্বসমক্ষে ঘটেছে সব, বইমেলা, লিটিল ম্যাগাজিন মেলা, ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ইত্যাদি সময়ে সকলেই দেখেছি এই সত্যি। এটা আলাদা কোনো লুকোনো সত্যি ছিলো তাও না। যদি জানতাম আপনাদের স্মৃতিশক্তি এতই দুর্বল, আরও গুছিয়ে বলতাম।’
শ্রেয়সীর ফেসবুক প্রোফাইল লক থাকলেও এই পোস্ট ফেসবুকের মাধ্যমে সবার সামনে এনেছেন তিতাস রয় বর্মণ নামে এক ভদ্রমহিলা৷ শ্রেয়সী এবং তিতাস ছাড়াও শ্রীতমা নামের এক ভদ্রমহিলাও একই ধরণের নির্যাতন হওয়ার ইঙ্গিত করেছেন৷ এ বিষয় কথা বলার জন্য দীপাংশু আচার্যর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি৷
দীপাংশু আচার্যর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হলে এই প্রতিবেদনেই আপডেট করে দেওয়া হবে৷