দুর্গাপুজোয় দুঃস্থদের পাশে দাঁড়াল পুলিশ

0
107

নিজস্ব সংবাদদাতা, নদিয়া: কেউ ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার, কেউ পুলিশ অফিসার, শিক্ষক, কেউ সরকারি বাসের চালক, কেউ আবার বেসরকারী কারখানার কর্মী। এরা প্রত্যেকেই এখন বার্ধক্যের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে। এঁদের কারও বাড়িতে থাকার জায়গার অভাব, কারও ছেলে এবং পুত্রবধূ দুজনেই চাকুরিজীবি। এই কারণে তাঁরা বৃদ্ধ বাবা-মা কে সময় দিতে পারে না। সারাক্ষন বাড়িতে একা থাকতে হয়। ওঁরা প্রত্যেকেই আজ বড় একা। সে কারণেই ওঁদের প্রত্যেকেরই আজ জায়গা বৃদ্ধাশ্রমে।

 

- Advertisement -

এই অবস্থায় নদিয়া জেলার নবদ্বীপ বেসরকারী বৃদ্ধাশ্রমের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের পুজোর দিনে আনন্দ দিলেন নবদ্বীপ থানার পুলিশ কর্মীরা। তাঁদেরকে নতুন বস্ত্র, দুপুরের খাওয়া-দাওয়া এবং দূরত্ব বিধি মেনে গাড়ি করে মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা দর্শন করালেন তাঁরা।

শুধু ওঁদের নয়, রবিবার নবদ্বীপ পুরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের চন্দ্র কলোনির বেশ কিছু অসহায় পরিবারের ছেলেমেয়েদের হাতেও তুলে দেওয়া হয় নতুন জামা প্যান্ট। এরপর ওদের জন্য থানা চত্বরে দুপুরের খাবারের আয়োজন করা হয়। এই বাচ্চাদেরও প্রতিমা দর্শনে নিয়ে যান পুলিশ কর্মীরা। এদিন এইভাবে থানায় নিয়ে এসে আপ্যায়িত করায় খুবই খুশি তারা।

নবদ্বীপ থানাতেই একসময় পুলিশ অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছেন বিকাশ ভাদুড়ী। এই ঘটনায় তিনি বলেছেন, ”ছেলে বৌমা চাকরি করে। আমাকে সময় দিতে পারে না। ওঁদের হাতে সময় খুব কম। কাজের মেয়ে আসে রান্না করে, বাসন মেজে দিয়ে চলে যায়। এরপর সারাদিন ঘরে একাই থাকতে হয়। সেজন্য একাকিত্বের জ্বালা থেকে বাঁচতেই, আমি এই বৃদ্ধাশ্রমে চলে এসেছি। সত্যি এখানে খুবই ভালো আছি”।

হাওড়া শিবপুরের বাসিন্দা বছর সাতাত্তরের সুধাবিন্দু করও এখন এই বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন। উনি একসময় একটি বেসরকারি সংস্থার কাজ করতেন। তাঁর ছেলে একজন ইঞ্জিনিয়ার। বৌমা হাওড়া জেলা স্কুলে চাকরি করেন। তিনি বলেছেন, ”আমার ছেলে বৌমা ফ্ল্যাটে থাকে। আমার মেয়ে স্বামীকে হারিয়েছে তাই ওঁ থাকে আমাদের শিবপুরের বাড়িতে। নাতি, নাতনি, বিধবা মেয়ে, ছেলে ও বৌমা এতগুলো সদস্য। সে কারণেই ওই বাড়িতে আমার জায়গার অভাব। এই বলে চোখের জল আর ধরে রাখতে পারলেন না বৃদ্ধ সুধাবিন্দু।

 

ওই বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিক কার্তিক লাহা জানিয়েছেন, তিনি একসময় কলকাতায় একটি সরকারি স্কুলের বাস চালাতেন। তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আমি একসময় গাড়ি চালিয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে খেলার মাঠে পৌঁছে দিতাম”। জানা গিয়েছে, কার্তিকবাবু এবং তাঁর স্ত্রী রেখা রানী দুজনেই বৃদ্ধাশ্রমে ভালো আছেন।

 

এই বিষয়ে নবদ্বীপ থানার আইসি কল্লোল কুমার ঘোষ বলেছেন, ”বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা। উৎসবের দিনে সকলেই পরিবারের সঙ্গে থাকতে ভালোবাসেন। যে কোনো কারণে ওঁরা আজ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। তাই নবমীর দিনে ওঁদের সঙ্গে সময় কাটাতেই আমাদের এই ছোট্ট উদ্যোগ”।

 

কল্লোলবাবু আরও বলেছেন, ”নবদ্বীপ পুরসভার চন্দ্র কলোনিতে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া অনেক পরিবার থাকে। যাঁদের এই পুজোর দিনগুলোতে নতুন জামা-প্যান্ট হয় না। তাঁদেরকেও নবমীর দিনে আমাদের সামান্য সামর্থ্য অনুযায়ী নতুন জামা প্যান্ট দেওয়া হল। দুপুরের খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। তারপর ওদেরকে ঠাকুর দেখানোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে”।