মায়ের প্রতীক্ষা

0
349

গল্প লেখিকা: শ্রেয়া চক্রবর্তী

ওই যে দূরে আশালতা বৃদ্ধাশ্রম, ওইখানে আমার আপনার মতো কত মানুষ, বলতে পারেন কত বাবা-মা আশায় বুক বেঁধে আছে সন্তানরা আসবে ফিরে তাদের কোলে। কারো কারো ছেলে মেয়ে কর্ম সূত্রে বিদেশে পরে আছে বহুদিন। নিজেদের ব্যস্ত জীবনে মা বাবা কে ফেলে রেখেছেন বৃদ্ধাশ্রমে। কিন্তু বাবা মা সন্তানদের কখনো ভুলতে পারে না।

- Advertisement -

তাই বিশ্ব যখন মারন করোনা ভাইরাস গ্রাস করেছে চিন্তা তো হওয়াটাই স্বাভাবিক। নম্বর ব্রেডে যিনি শুয়ে আছেন, নাম কাঁকনদেবী। ওঁনার বয়স হয়েছে ৮০ বছর, এমনিতে উনি ঠিকই আছেন। বয়স্ক জনিত রোগ কিছু আছে তবে এখনো উনি নিজের সব কিছুই নিজে করেন। আজ ১০ বছর হল এই বৃদ্ধাশ্রমই হলো ওনার বাড়ি। এখন কার প্রতি টি মানুষ ওনার খুব খেয়াল রাখে। তাই একাকিত্বের কষ্টটা কিছুটা ভুলে থাকার চেষ্টা করেন। ওঁনার এক মাত্ৰ ছেলে আমেরিকার ডাক্তার। ছোটবেলা থেকেই বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিল ছেলে বিলেত ফেরত ডাক্তার হবে।

কিন্তু ওই যে আর পাঁচ জনের মতো উনিও ওখানেই বিদেশিনীর সাথে সংসার বসিয়েছেন। বাবা যখন বেঁচেছিলেন তখন তবু মাসে দুবার ফোন করতো।বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে সে পাট কবেই গেছে চুকে।এখন তিন চার মাস বাদে বাদে ফোন আসতো।প্রতি তিন মাস অন্তর টাকা পাঠিয়েই কর্তব্যটা সেরে নেন।

বেশ কিছু দিন হলো কাঁকন দেবী দুশ্চিন্তায় আছেন, মনের মাঝে বাসা বেঁধে আছে ভয় শুধুই ভয়। এ ভয় তার নিজেকে নিয়ে নয়। একমাত্র ছেলে কেমন আছে ,তার কোনো খবর পাচ্ছেন না তিনি। সত্যি বলতে কিছু দিন আগে বৃদ্ধাশ্রমে ফোন এসে ছিল আমেরিকা থেকে। কাঁকন দেবীর এক মাত্ৰ পুত্ৰ আর এই জগতে নেই। মারণ রোগে কিছু দিন আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন উনি। আশ্রমের ম্যানেজার সে খবর কাঁকন দেবীকে জানায়নি। কারণ ওঁনার জানেন এই খবর ওনাকে দিলে উনিও মারা যাবেন।

আজ ১০ বছর ধরে ওই আশ্রমে থাকছেন।তাই মুখে ছেলের ওপর অভিমান করে যাই বলুন না কেন,অন্তরে ছেলের প্রতি ভালোবাসা একটুকুও কমতি নাই।ওনার সাথে কথা বললেই তা বোঝা যায়।সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত যতক্ষন উনি জেগে থাকেন প্রতি মুহূর্তে ফোনের দিকে কান পেতে থাকেন। নিজের থেকেও যে ফোন করবেন, তাতেও ছেলের নিষেধ ছিল, তাই সে সাহসটাও ওঁনার নেই। যদি ছেলে আর কোনো দিন ফোনই না করে। জীবনের এই শেষ প্রান্তে এসেও কাঁকন দেবী ছেলের মুখ দেখার আশায় বুক বেঁধে, পথ চেয়ে বসে রয়েছেন।