অন্বেষণ: মেরিন ড্রাইভে আরব সাগরের তীরে বড় বড় বোল্ডার গুলোর গা বেয়ে একটু একটু করে সন্ধে নামছে। পুরোনো দিল্লির হৃদপিণ্ড চান্দনী চক। তার এগলি ওগলি যেন নিশ্চুপ! পশ্চিমের আকাশে কেবল সন্ধেতারা একটু একটু করে সরছে আর বাকি সব ক্লান্ত, জ্বরের তাপে পুড়ছে!
অন্যদিকে, নিমতলা পেরিয়েই আহিরীটোলার দিকে যেতে যে বড় ঘাটটা পরে, তার একটা একটা করে সিঁড়ি ভিজছে, জল বাড়ছে, চারদিকে কেউ নেই। মন্দিরে সন্ধে আরতি নেই, ট্রেনের শব্দ নেই! কারণ এই পৃথিবীর বেশিরভাগ শহরের অসুখ করেছে। আর শহরের অসুখ সারাতে এক মারণ ভাইরাসের সাথে অসম লড়াই করে চলেছে মানুষ।
এই ভাইরাস ম্যানমেইড নাকি প্রাকৃতিক…নেটফ্লিক্স নাকি দ্য আইস অফ ডার্কনেস…. প্রশ্ন, সন্দেহ, রাজনীতি, দম্ভ, কে বুনোওল আর কে বাঘা তেঁতুল এসব চক্রবূহের মধ্যে খালি দেখছি, প্রতিদিন মৃত্যুমিছিল। অসহায় ভাবে প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার আগে প্রিয় মানুষগুলোকে ছুঁতে না পারার কষ্টে চোখের কোনের জল জমছে। কোনও দেশে হচ্ছে গণসৎকার, কোথাও গণকবর… কিন্তু এসব আর কতদিন! বিশ্বজুড়ে এই মারণ ভাইরাস এখনো অবধি প্রাণ নিয়েছে ২১,০০০ এর বেশি মানুষের। আক্রান্ত প্রায় ৪,৬৮,৬৪৪ জন।
চিনের ইউহান উৎপত্তি স্থল হলেও করোনার দাপটে বিধ্বস্ত ইতালি থেকে শুরু করে স্পেন, আমেরিকা, ইরাণ, ভারত-সহ অগুনতি দেশ। এবার শুধু লড়ে যাওয়ার পালা। এ এক অসম লড়াই। লড়াইটা তার সাথে, যাকে খালি চোখে দেখা যায় না। আবার লড়াইটা নিজের সাথেও! কারণ আমার শহরের পাশাপাশি, আমার দেশ ও পৃথিবীর বিভিন্ন শহরের গায়ে ক্ষত, হাহাকার! পৃথিবীকে সারিয়ে তুলতে গেলে আমাদের একটাই উপায়, নিজেদের স্বেচ্ছাবন্দি করে ফেলা।
‘এখানে সবাই একা, ভীষন ভীষন একা’…. সামাজিক দূরত্বে থাকা অসম্ভব মনে করা মানুষের এটাই এখন অ্যানথাম হওয়া উচিত। মানুষ এটা বুঝুক, দিন শেষে সব্বাই একাই। তাই পৃথিবীকে সুস্থ করার স্বার্থে মানুষবাহিত ভাইরাসের যাত্রাপথটাকে কোনোভাবে ঘায়েল করতে পারলেই কেল্লাফতে! তারপর ভ্যাটিকানে পোপ আবার সকলের উদ্দেশ্যে হাত নাড়বেন, ম্যানহাটানের কোন এক রাস্তায় বেজে উঠবে ভায়োলিন। ঐত্যিহ্যের শহরের গায়ে শ্যাওলা পড়বে না। আবার মানুষ বদ্ধ দুয়ার খুলে শিল্প করবে, ক্যানভাসে রঙ চড়াবে।
ততদিন আমরা নিজেদের বন্দি রেখে শহরের গায়ে মলম লাগাব৷ শহর সেরে উঠুক, মানুষ সুস্থ হোক। আর যেন পৃথিবী জুড়ে মৃত্যু মিছিল না দেখতে হয়৷ কিউবা থেকে ইতালিতে যাওয়া ডাক্তাররাও নিজেদের প্রিয় জনের কাছে ফিরে আসুক৷ সুস্থ থাকুক তারা, যারা নিজেদের প্রাণপাত করছেন মানুষের জন্য। আর আমরাও তাদের জন্য, শুধু তাদের জন্য নয়, আমাদের ভালোর জন্য স্বেচ্ছা নির্বাসনে যাই নিজের প্রিয় জনদের কাছে ফিরে আসার জন্য, স্বেচ্ছাবন্দি হই। ততদিন….
‘স্বেচ্ছাবন্দি আমার শহর, স্বেচ্ছাবন্দি আমিও
শহর সারলে দেখা হবে, গল্প গুলো জমিও’…
জমুক না হয়!!