আধুলি শতকে ম্লানের পথে বাঙালির নন্টে-ফন্টে

0
995

বইয়ের পাতা থেকে টিভি পর্দা সমান তাদের জনপ্রিয়তা৷ সমবয়সী সহপাঠী দুই বন্ধু সব সময় এক সঙ্গে চলছে ফিরছে৷ আর তাদের ক্ষতি করতে উঠে পড়ে লাগে এক দাদা৷ এই তিন চরিত্রের কথা ভাবলেই যাদের কথা মাথায় আসে তারা হল নন্টে-ফন্টে ও কেল্টুদা৷ প্রাণখুলে হাসার জন্য নন্টে-ফন্টের জুড়ি মেলা ভার৷ চলতি সপ্তাহে তারা পার করে ফেলল পঞ্চাশ বছর৷

আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে ছিল না এতো কার্টুন৷ না ছিল এতো কমিক্স বই৷ তখন তো এই নন্টে-ফন্টে ছিল বাঙালির হাস্যকৌতুকের বিষয়বস্তু৷ কিন্তু বর্তমান যুগে বাঙালির সেই আবেগটা যেন কোথাও একটা হারিয়ে যাচ্ছে৷ ফিকে হয়ে যাচ্ছে দুই বন্ধুর বন্ধুত্ব৷ এখনকার বাচ্চারা বেশিরভাগ মুঠোফোনে নিজেদের ব্যস্ত রাখে৷ তাই কোথাও যেন মলিনের পথে নন্টে-ফন্টে৷

- Advertisement -

বাঙালি যেখানে নন্টে-ফন্টে ভুলে যাচ্ছে, সেখানে তার আবিষ্কর্তা সাহিত্যিক নারায়ণ দেবনাথকে কতটা মনে রেখেছে তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন৷ আজও অমর হয়ে রয়েছে তাঁর এই সৃষ্টি৷ আট থেকে আশি সকলেই দেখতে বা পড়তে ভালোবাসেন এই কার্টুন৷ এখনও টিভিতে বিভিন্ন চ্যালেনে রবিবার দেখা যায় নন্টে-ফন্টে ও কেল্টুদার জুড়িকে৷ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলতে থাকে তাদের দস্যিপনা৷ আর দিনের শেষে মাস্টারমশাইয়ের কাছে কখনও বেতের বাড়ি খায় কেল্টুদা৷ আবার কখনও তার উপর ফুলদানি ছুঁড়ে মারে শিক্ষকমশাই৷

 

নন্টে-ফন্টে পর্যন্ত তাকে জব্দ করতে ছাড়ে না৷ তাকে নকল বাঘ সেজে প্রবলভাবে ভয় দেখায়৷ কেল্টুটা হাজার চেষ্টা করেও নন্টে-ফন্টেকে শায়েস্তা করতে পারে না৷ নন্টে-ফন্টের সঙ্গে কেল্টুদার দুষ্টুমি চললেও তাদের মধ্যে গভীর বন্ধু অটুট থাকে৷ এটি প্রথম প্রকাশিত হয় মাসিক পত্রিকা ‘কিশোর ভারতী’তে৷ পরবর্তীতে দেব সাহিত্য কুটির থেকে বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে৷ ২০০৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে রঙিন সংষ্করণও প্রকাশিত হচ্ছে৷ এই কমিক থেকে পরে একটি এনিমেটেড ভিডিও সিরিজও নির্মিত হয়েছে৷

নন্টে-ফন্টের চরিত্রের বর্ণানা করলে দেখা যায় নন্টে দেখতে প্রায় ফন্টের মতোন৷ তবে চেহারা কিছুটা ছিপছিপে৷ গল্পে তাকে অধিকাংশ সময় কমলা জামা পরে থাকতে দেখা যায়৷ তার চুল তুলনামূলক ভাবে বড় এবং পেছনে টিকি আছে৷ দুজনের চিন্তা ভাবনাও প্রায় একই রকম৷ নন্টে ও ফন্টে একে অপরের সবচেয়ে ভালো বন্ধু৷

অন্যদিকে, পোষাক ও চালচলনে নন্টে ফন্টে অনেকটা এক রকম হলেও মাথার পিছনের টিকি না থাকায় ফন্টেকে আলাদা করা যায়৷ সাদা-কালো সংষ্করণে দুজনেরই পরনে সবসময় সাদা শার্ট এবং কালো হাফ-প্যান্ট থাকতো৷ তবে রঙিন সংষ্করণে দেখা যায় নীল শার্ট পরে থাকতে দেখা যায়৷ হোস্টেলের মনিটর কেল্টু নন্টে-ফন্টের থেকে বয়সে বড়৷ এক ক্লাসে ছয়বার ফেল করেছে সে৷ আর সব ছাত্ররা তাই তাকে “কেল্টুদা” বলে সম্বোধন করে৷ কেল্টু দেখতে লম্বা, শীর্ণকায় এবং কোঁকড়াচুলো৷ কমিকে আর-সব ছাত্রদেরকে হাফ-প্যান্ট পরনে দেখা গেলেও কেল্টুকে দেখা যায় ফুল-প্যান্টে৷

নন্টে-ফন্টেকে ও অন্যান্য কম বয়সীজন ছাত্রদেরকে দিয়ে সব কাজ করিয়ে নেয়ার জন্য কেল্টু বিভিন্ন রকম ফন্দি-ফিকির করে, ভয়-ভীতিও প্রদর্শন একেবারে বিরল নয়। মূলত সে খাবার হাতিয়ে নেওয়ার ফন্দি করে। তবে তার আঁটা ফন্দিতে প্রায়শই সে নিজে জব্দ হয়। কেল্টু সুপারিন্টেনডেন্ট স্যারকে খুশি রাখতে চায়, তবে অধিকাংশ গল্পেরই সমাপ্তি ঘটে এর উল্টো ঘটনা দিয়ে। প্রত্যেক পর্বে শুরুতে অবশ্য সে বরাবরই স্যারের স্নেহভাজন থাকে।

হোস্টেল ও তার ছাত্রদের দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন টাক মাথা ও বিশাল বপুর অধিকারী ভোজনরসিক সুপারিন্টেনডেন্ট স্যার। ছাত্রদের কড়া শাসনে রাখতে পছন্দ করেন আর শাস্তি হিসেবে বেত মারাটাই তাঁর প্রিয়। অনেক গল্পেই দেখা যায় রাতে ঘুমানোর আগে তিনি নিয়মিত এক বাটি দুধ খান। অধিকাংশ গল্পেই তাকে নিয়ে বিভিন্ন রকম তামাশা করা হয় এবং প্রায়ই তিনি প্রচন্ড জোরে আছাড়