বিশ্বদীপ ব্যানার্জিঃ অনিল বিশ্বাসকে কি মিস করছে আলিমুদ্দিন? প্রশ্নটা উঠছে এই কারণেই, আবারও একটা সুযোগ হাত থেকে বেড়িয়ে গেল বামেদের। বিনা নোটিশে রাজ্য সরকার কর্তৃক হকার উচ্ছেদের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সরব হয়ে আন্দোলনে নামতে চাইছিলেন সিপিএমের ইয়ং ব্রিগেড। কিন্তু তাতে প্রবীণ কেষ্টবিষ্টুরা সায় জানানো দূরে থাক, মুখে পুরো কুলুপ এঁটে বসেছিলেন। হয়ত তাঁদের ভয় ছিল, কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটে বেরিয়ে পড়তে পারে। ফলে গরীব খেটে খাওয়া মানুষের মনের কাছাকাছি আবার পৌঁছনোর যে মওকা পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মত এসেছিল তা রাজ্য সরকারের হকার উচ্ছেদ অভিযানের মতই উচ্ছেদ করে দিলেন তাঁরা। আর এখানেই উঠে আসছে অনিল বিশ্বাসকে নিয়ে প্রশ্নটা। আর তুলছেন খোদ আলিমুদ্দিনেরই একাংশ।
আরও পড়ুনঃ কাজ ফুরোলেই পাজি, কেন গরিবের পেটেই লাথি মারে শাসক
সালটা ১৯৯৬। এক রাতে কল্লোনিনী তিলোত্তমা যখন ঘুমিয়ে কাদা, ঠিক তখনই পুলিশ ও পুরসভার যৌথ অভিযানে গড়িয়াহাট মোড়, লেক মার্কেট, কালীঘাট, হাতিবাগান, বিধান সরণি, ধর্মতলা ইত্যাদি একাধিক এলাকায় ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল হকারদের স্টল। যার প্রতিবাদে সেই রাতেই পথে নামেন আজকের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সারা শহরে প্রতিবাদ জানিয়ে গড়িয়াহাটে অবস্থান বিক্ষোভে বসে পড়েন। আজ সেই তিনিই শাসকের আসনে এবং সেই একই অভিযোগে অভিযুক্ত। তবু সেদিনের শাসক বামেদের পাল্টা প্রতিবাদ সাহসেই কুলাল না ঝোলা থেকে পুরনো বেড়াল বেরিয়ে যাওয়ার ভয়ে। বরং তাঁরা নিলেন ‘ধীরে চলো’ নীতি। গোদা বাংলায়, জল মাপা। বিমান বসু, মহম্মদ সেলিমদের মত প্রবীণ বাম নেতৃত্বরা নজর রাখছিলেন হকার উচ্ছেদের প্রতিবাদে জনমত কতটা জোরালো হচ্ছে সেদিকে। ফুটপাত জবরদখল করে পসরা সাজিয়ে বসা হকারদের নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্য ক্ষোভ নেহাত কম নেই। ফলে তরুণবাহিনীর উচ্ছেদের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আন্দোলনের প্রস্তাবে মুখে রা-ই কাড়লেন না আলিমুদ্দিনের বনস্পতিরা।
অনিল বিশ্বাস আজ থাকলেও কি এমনটা ঘটত? দলের রাজ্য কমিটির জনৈক প্রবীণ সদস্য সরাসরি জানাচ্ছেন, “অনিলদা’র আমলে আর যাই হোক না কেন, পার্টিকে এরকম সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে হতো না। অনিলদা যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে হয়তো ৩৪ বছরের সরকারটাও এমনভাবে খড়কুটোর মত ভেসে যেত না।” উল্লেখ্য, অনিল বিশ্বাস ১৯৯৮ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত আমৃত্যু সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক পদে থাকাকালীন রাজ্যে বিরোধীদের তেমন সংগঠন ছিল না। তবু কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ ছিল না বাম সরকারের পক্ষে। কারণ সিপিএমের অন্দরেই তখন একাধিক শক্তিশালী গোষ্ঠী। সিপিএমের লড়াইটা ছিল সিপিএমের বিরুদ্ধেই। এহেন পরিস্থিতিতে রাজ্য সম্পাদক পদে অনিল বিশ্বাসের ভূমিকা ছিল যথেষ্টই ইতিবাচক। অন্যদিকে, অনিলবাবুর আমলেই প্রকাশ্যে এসেছিল আমলাশোলের (বেলপাহাড়ি) মতো অনাহারের মৃত্যুর ঘটনা। যা সারা দেশে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছিল সিপিএমকে। পাশাপাশি ছোটো আঙারিয়া, নানুর ইত্যাদি একাধিক গণহত্যার ঘটনাও তোলপাড় করে দিয়েছিল ওই সময়ে। সব পরিস্থিতি ঠাণ্ডা মাথায় সামলেছিলেন অনিল বিশ্বাস।
খাস খবর ফেসবুক পেজের লিংকঃ https://www.facebook.com/share/434buqMrZ98y4kma/?mibextid=qi2Omg
খুব স্বাভাবিকভাবেই তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে অনিলকে মিস করতে পারে সিপিএম। বিশেষ করে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে হকার উচ্ছেদ নিয়ে একাধিক সিদ্ধান্ত সামনে এনেছেন সম্প্রতি তাতে বিষয়টি নিয়ে আর ঘাঁটাঘাঁটি সম্ভব নয়। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কেন মঙ্গলবারই পথে নামা হল না? অনিল বিশ্বাস থাকলে নিশ্চিতভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়ে এরকম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হত না বামেদের।