ভারতীয় রেলকে (Indian Railways) যে দেশের লাইফ লাইন বলা হয়, তা নেহাত কথার কথা নয়। দেশের কয়েক লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র এই রেল। সেইসঙ্গে দেশের বেশিরভাগ মানুষেরই যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। অর্থাৎ সব মিলিয়ে রেল (Indian Railways) ছাড়া ভারতীয় জনজীবন যে কার্যত অচল তা আর নতুন করে বলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
খুব স্বাভাবিকভাবেই তাই স্বাধীনতার পর থেকে রেলের প্রতি এক বাড়তি গুরুত্ব দিতে হয়েছে কেন্দ্রকে। কিন্তু এই গুরুত্ব দিয়ে শেষপর্যন্ত লাভটা কী হল? ১৯৪৭ সালের পর একের পর এক পরিবর্তন ঘটেছে রেলের (Indian Railways) কাঠামোতে। যাত্রী সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে এসেছে একের পর এক নয়া প্রযুক্তি। অথচ তা সত্ত্বেও রেল দুর্ঘটনা ঠেকানো যাচ্ছে কোথায়? তথ্য বলছে, গত ৬২ বছরে রেল দুর্ঘটনার সংখ্যা ৩৮ হাজারেরও বেশি। বিশেষ করে, মাত্র এক বছরের ব্যবধানে করোমণ্ডল এক্সপ্রেস এবং কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা অত্যন্ত নিম্নমানের রেল পরিষেবার করুণ ছবিটা তুলে ধরেছে দেশের মানুষের সামনে। আর এখানেই উঠে আসে রেল মন্ত্রক তথা কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা সংক্রান্ত প্রশ্নটা। যার মধ্যে রয়েছে পৃথক রেল বাজেট তুলে দেওয়া বা লক্ষাধিক শূন্যপদের মত বিষয়গুলি। যা ইতিপূর্বেই দুটি পর্বে তুলে ধরা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ লক্ষ লক্ষ শূন্যপদে দুর্ঘটনা তো স্বাভাবিক
কিন্তু এরপরও তো কিছু কথা বাকি থেকে যায়। কিন্তু সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে যে কথাটা আরও একবার মনে করিয়ে দেওয়া দরকার তা হল, রেল (Indian Railways) এমন একটি দফতর যার ওপর লোভাতুর দৃষ্টি থাকে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিটি শরিক দলের-ই। সকলেই রেল নিজের হাতে রাখতে চায়। কিন্তু এরপরও রেলের বেসরকারীকরণ হতে চলার খবর বারবার হাওয়ায় ভেসেছে। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, রেল নিয়ে কেন্দ্রের পরিকল্পনা আসলে ঠিক কী? স্বাধীনতার এত বছর পরেও এ বিষয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না এই কারণেই, আজ পর্যন্ত জনসাধারণের সামনে কোনো শ্বেতপত্র প্রকাশ করেনি ভারতীয় রেল।
শ্বেতপত্র আসলে কী?
শ্বেতপত্র হল এমন একটি পদ্ধতি বা উপায়, সরকার যেটি কোনো আইন প্রণয়ন করার আগে নীতিগত পছন্দ উপস্থাপন করতে পারে। একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের মাধ্যমে সরকার কোনো একটি বিতর্কিত নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে জনমত এবং নীতিটির সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে জানতে পারে। অর্থাৎ ভারতীয় রেল (Indian Railways) যদি পরিকাঠামোয় নতুন কোনও পরিবর্তন আনা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে তাহলে জনগণ সেই বিষয়ে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করতে পারবে।
ভারতীয় রেল শ্বেতপত্র প্রকাশ করছে না কেন?
ভারতীয় রেল (Indian Railways) কী করছে বা কেন করছে তার খবর কেউ জানে না। ইতিপূর্বে ২০১৭ সালে যখন পৃথক রেল বাজেট তুলে দেওয়া হল, তখনও সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানায়নি রেল। এমনকি সুরক্ষা বিভাগে কেন লক্ষ লক্ষ শূন্যপদ সে বিষয়েও মানুষের মনের ধোঁয়াশা দূর করছে না রেল। সুতরাং তারা যে নিজের কাজের খতিয়ান বা শ্বেতপত্র-ও দিতে চাইবে না, সেটাই তো স্বাভাবিক।
স্বাধীনতার পর থেকে ভারতীয় রেলে (Indian Railways) যে একাধিকবার আধুনিকীকরণ ঘটেছে সে কথা অস্বীকার করার কোনও জায়গাই নেই। কিন্তু এটা না বলে উপায় নেই যে আজ অবধি যত না গালভরা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তার সিকিভাগ কাজেরও খতিয়ান তুলে ধরা হয়নি মানুষের কাছে। আর নাই প্রকাশিত হয়েছে কোনও শ্বেতপত্র। ঠিক এই কারণেই আজ স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরেও রেল সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণার অভাব সাধারণ মানুষের মধ্যে। আসলে সরকার বা রেল একটা কথা খুব ভালো করেই বুঝে গিয়েছে। যখন একটা দুর্ঘটনা ঘটবে, কেবল তখনই কয়েকদিন হৈ চৈ হবে একটু। তারপর আবার যেই কে সেই। কাজেই, বেশি চাপ নিয়ে লাভ কী?